নিজস্ব প্রতিবেদক
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)-এর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, গ্রুপিং দ্বন্দ্ব ও অনিয়মের কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের পর অন্যান্য দল সমর্থিত কৃষি নেতাদের দাপটে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই বিভক্তি মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা কৃষি খাত ও উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৭টি সংস্থায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ক্যাডারদের প্রভাব ছিল ব্যাপক। বিপরীতে, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন কোণঠাসা। মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়, যা ধীরে ধীরে বিভক্তি সৃষ্টি করে। অভিযোগ রয়েছে, সদ্যবিদায়ী সরকারের কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এই বিভক্তির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন।
গত আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পরপরই ডিএই-সহ বিভিন্ন সংস্থায় বিরোধী দল সমর্থিত কর্মকর্তাদের পদায়ন শুরু হয়। অন্য সংস্থাগুলোতে এই পরিবর্তন আপাতদৃষ্টিতে শান্ত থাকলেও, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তা প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের রূপ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ৭৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়, যা নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ডিএই কর্মকর্তাদের মধ্যে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট কেন্দ্রিক গ্রুপিং আরও স্পষ্ট হয়েছে। এই কোন্দলের জেরে চলতি মাসের মাঝামাঝি এক উপপরিচালককে বদলির আদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এর প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটকে তালা দেওয়া, সংবাদ সম্মেলন আয়োজন ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, এসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এক বিএনপি-সমর্থিত কৃষি নেতা।
সাবেক কর্মকর্তারা মনে করছেন, কৃষিবিদদের মধ্যে সমতা না থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে পড়বে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের সাবেক পরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ মো. নজরুল ইসলাম বলেন,
“ড. আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন প্রথম কৃষিবিদ, যিনি কৃষিমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কৃষিবিদ ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। বরং মন্ত্রণালয়কে দলীয়করণ ও পকেট ভিত্তিক সংগঠন হিসেবে পরিচালনা করেছেন। এখন যদি কৃষিবিদদের মধ্যে সমতা ফিরিয়ে আনা না যায়, তাহলে আগের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটবে।”
অন্যদিকে, চলমান অস্থিরতা দমনে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন ডিএই মহাপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন,
“কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, তাই মন্ত্রণালয় তাদের বদলি করেছে। ভবিষ্যতে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খামারবাড়িতে সব ধরনের সভা ও কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হলেও, বহিরাগতদের আনাগোনা অব্যাহত রয়েছে। ডিএই-এর কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি ও প্রকল্প পরিচালনায় অস্থিরতা থাকায় সার্বিকভাবে একটি থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই অস্থিরতা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না হলে, তা কৃষি উৎপাদন ও পরিসংখ্যান ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক অনিয়ম বন্ধ না হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তার মূল লক্ষ্য ও কার্যক্রম থেকে সরে যেতে পারে, যা কৃষি খাতের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।