পোশাকখাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য পূরণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো পোশাকশিল্প। রপ্তানি আয়ের বিশাল অংশ এই খাত থেকে আসে। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিক সংকটসহ নানা চ্যালেঞ্জের কারণে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে হলে শিল্প মালিক, শ্রমিক, সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প (RMG) বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক খাত। শ্রমিকবান্ধব নীতি, সাশ্রয়ী উৎপাদন ব্যবস্থা এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারমূল্যের কারণে এ খাত আন্তর্জাতিক বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। তবে, করোনা মহামারির পর থেকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে পোশাক রপ্তানির ওপর।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধির প্রধান চ্যালেঞ্জ:
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা
- কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি
- জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট
- শ্রমিক অসন্তোষ ও মজুরি কাঠামো
- প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার, উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের একযোগে কাজ করতে হবে। এজন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
১. টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা
পোশাকশিল্পকে আরও উন্নত করতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে।
২. শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি
শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বাড়ালে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সহজ হবে।
৩. নতুন বাজার অনুসন্ধান
ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারের পাশাপাশি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার মতো নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে। এতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে।
৪. সরকারের নীতিগত সহায়তা
পোশাকখাতকে এগিয়ে নিতে কর ছাড়, সহজ ঋণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অন্যান্য সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার।
৫. প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি
ডিজিটাল প্রযুক্তি, অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করলে উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং উৎপাদন দক্ষতা বাড়বে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সঠিক পরিকল্পনা, নীতি সহায়তা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।
পোশাকশিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকার, উদ্যোক্তা, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। একযোগে কাজ করলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে এবং রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে।