ঈদ যাত্রা শুরু: ছুটির আগেই ঘরমুখো মানুষের ঢল
দেশজুড়ে ঈদুল ফিতরের উৎসবের আমেজ শুরু হলেও এখনও প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় বাকি। তবে এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে হাজারো মানুষ। স্টেশন, বাস টার্মিনাল এবং লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেলেও এখনও তীব্র চাপ তৈরি হয়নি। তবে অনেকেই আগেভাগে স্ত্রী ও সন্তানদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন, যাতে শেষ মুহূর্তের যাত্রা ভোগান্তির শিকার হতে না হয়।
সড়ক, নৌ ও রেলপথে আগাম টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে গত বৃহস্পতিবার। রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার থেকে এই আগাম টিকেটের যাত্রা শুরু হবে। সড়ক পথের চিত্রও একই রকম। বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদে যাত্রীদের চাপ ২৭ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি থাকবে।
এবারের ঈদে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটির কারণে টানা ১১ দিনের দীর্ঘ ছুটি পাচ্ছেন অনেকে। তাই অনেকে আগে ভাগে রওনা দিচ্ছেন গ্রামমুখী যাত্রায়। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি শুরু হওয়ায় অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তবে পোশাক কারখানাগুলো কখন ছুটি ঘোষণা করবে তার ওপর নির্ভর করছে মূল ঈদযাত্রার চাপ।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, মহাখালী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এখনো অতিরিক্ত ভিড় নেই। তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লম্বা ছুটির কারণে ঈদের যাত্রা ধাপে ধাপে হবে, তাই বড় ধরনের যানজট বা অতিরিক্ত ভোগান্তি কম হবে বলে আশা করা যায়।
রেলের আগাম টিকেট বিক্রি শেষ হয়েছে এবং ২৫ মার্চ থেকে সেই টিকেট অনুযায়ী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, এবারের ঈদে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত ট্রেনও চালানো হবে, যাতে ঈদযাত্রা সহজতর হয়।
সড়কপথে ঈদযাত্রা তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকলেও, মূল চাপ আসবে ২৭-২৯ মার্চের মধ্যে। যাত্রীদের সুষ্ঠু যাত্রার জন্য হাইওয়ে পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। চালক-শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ঈদের ঠিক আগে তিন দিন সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটবে।
লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে এখনও তুলনামূলক কম ভিড় থাকলেও, শিগগিরই তা বাড়তে পারে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলগামী অনেক যাত্রী আগেভাগে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, যাত্রীদের সুষ্ঠু ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
যদিও এবারের ঈদযাত্রা ধাপে ধাপে হচ্ছে, তবে পোশাক কারখানার ছুটির সময় নির্ধারণের ওপর নির্ভর করছে ঈদের আগে প্রধান যাত্রার চাপ। যদি সব কারখানা একই সময়ে ছুটি ঘোষণা করে, তবে শেষ মুহূর্তের ভোগান্তি এড়ানো কঠিন হবে।
- পরিকল্পিত যাত্রা: শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে টিকেট কাটা উচিত।
- বিকল্প পথ ব্যবহার: প্রধান মহাসড়কগুলোর পাশাপাশি বিকল্প রুট ব্যবহার করলে যানজট এড়ানো সম্ভব।
- নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: ব্যক্তিগত গাড়ি চালকদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, পাশাপাশি গণপরিবহনে যাত্রীদের সতর্ক থাকা জরুরি।
- প্রশাসনিক ব্যবস্থা: হাইওয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা থাকলে যাত্রা আরও স্বস্তিদায়ক হবে।
এবারের ঈদযাত্রায় দীর্ঘ ছুটির সুবিধার কারণে ধাপে ধাপে যাত্রী চাপ পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে মূল চাপ নির্ভর করছে পোশাক কারখানার ছুটির সময়সূচির ওপর। রেল, সড়ক ও নৌপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রস্তুত রয়েছে। নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক যাত্রার জন্য প্রত্যেকেরই উচিত সচেতনতা ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।