বিএনপির বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ: ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের কড়া বক্তব্য
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে দমন করতে রাষ্ট্রের প্রতিটি শক্তি ব্যবহার করেছেন। শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোলা জেলার সদর উপজেলা আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দেশের মানুষের কল্যাণে এক দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, “দেশে এমন কোনো বিএনপির নেতাকর্মী নেই যে মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত নয়। শুধু নেতাকর্মীই নয়, তাদের পরিবারকেও অন্যায়ভাবে নিপীড়ন করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিস্ট শাসনের কারণে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের রাজত্ব ধরে রাখতে এবং লুণ্ঠিত সম্পদ নিরাপদ রাখতে গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ইতিহাসের স্বৈরশাসকরা যে নির্মমতা দেখাননি, বর্তমান সরকার তা দেখিয়েছে। হত্যাকাণ্ড চালিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো বর্বরতাও ঘটিয়েছে। এই সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগের বিচার তরান্বিত করতে হবে।”
ইশরাক হোসেন বলেন, “যখন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দী করা হয়, তখন গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তারেক রহমান। জুলাই বিপ্লবেও একদফা আন্দোলনের পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই বিপ্লবের কৃতিত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই আন্দোলনে কার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা জনগণ জানে। আমাদের অতীত সংগ্রামের কথা জনগণের কাছে প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই, কারণ তারা সবই জানে।”
তিনি বলেন, “আমাদের এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো রাষ্ট্র যাতে আমাদের হুমকি দিতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমাদের কাজ এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে।”
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ইশরাক হোসেন বলেন, “আমরা এখনও বিরোধী দল। আমাদের অত্যন্ত সংযত আচরণ করতে হবে এবং সংগঠিত থাকতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের আলোকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনীতি করতে হবে। তাহলেই আমরা জনগণের সমর্থন ধরে রাখতে পারবো। তারেক রহমানও বলেছেন, আগামী নির্বাচন সহজ হবে না। বিএনপি জনপ্রিয় দল বলে বসে থাকলে চলবে না, জনগণের দ্বারপ্রান্তে যেতে হবে।”
ভোলা সদর উপজেলা আহ্বায়ক আসিফ আলতাফের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর, রাইসুল আলম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শফিউর রহমান কিরন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুর রহমান বাচ্চু মোল্লা, হারুনর রশীদ ট্রুমান, হুমায়ুন কবির সোপান, এনানুল হক প্রমুখ।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের অভিযোগ ও দাবি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সামনের নির্বাচন ও আন্দোলনের গতিপথ কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।