জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবি: আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তারা আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল চায় এবং শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে সরব রয়েছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারের ১৫ তলায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি এই দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, “দেশের ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হলেও এখনো গণহত্যার দায়ীদের বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল। এমন একটি স্পষ্ট আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন থাকার পরও বিচারিক কার্যক্রমের ধীরগতি নিন্দনীয় বলে মনে করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ ফ্যাসিবাদী রেজিমের অধীনে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের অগ্রগতি দেখতে চায়।” তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করেন, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের অধীনে সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম, ক্রসফায়ার ও ভোট ডাকাতির ঘটনাগুলোর বিচার না হলে গণতন্ত্রের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বিচারের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং তাদের রাজনীতিতে ফেরার সব প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবি, বিচারিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অপরাধের পরিণতি দৃশ্যমান হতে হবে। দলটি মনে করে, অপরাধ স্বীকার, অনুশোচনা এবং দায়িত্ব গ্রহণ ছাড়া আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা তাদের রক্ত দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিদায় করেছে। আমরা বারবার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি জানিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, এনসিপির নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি চলমান থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, সিনিয়র সদস্যসচিব তাসনিম জারা প্রমুখ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এনসিপির অবস্থান ও দাবিগুলো নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। দলটি আওয়ামী লীগের অপরাধের বিচার, তাদের নিষিদ্ধকরণ ও রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে চায়। তাদের বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং আগামীর রাজনীতিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।