নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঁচ কর্মকর্তার অবৈধভাবে প্রথম শ্রেণিতে পদোন্নতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি স্পর্শকাতর উল্লেখ করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রিয়াদুল ইসলাম বলেছেন, আইন মেনে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে এনসিটিবির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পান পাঁচ কর্মকর্তা—আব্দুর রশিদ (উপ-নিয়ন্ত্রক), রেজাউল ইসলাম, মাহমুদা খানম (উপ-নিয়ন্ত্রক), এ.বি.এম জসিম উদ্দিন (উপ-নিয়ন্ত্রক) ও আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে, তারা মূল পদের নাম পরিবর্তন, জ্যেষ্ঠতার শর্ত ভঙ্গ এবং অনৈতিক সুপারিশের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির পদে পদোন্নতি নেন।
বিশেষভাবে, কম্পিউটার অপারেটর এ.বি.এম জসিম উদ্দিনের নিয়োগ ছিল অস্থায়ী, তবে তাকে প্রথম দিন থেকেই স্থায়ী দেখিয়ে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়। এছাড়া, রেজাউল ইসলাম ও অবসরপ্রাপ্ত আব্দুর রশিদ নিয়মবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি পান। মাহমুদা খানম ও আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরীর ক্ষেত্রে ২০১০ সালে চাকরি স্থায়ীকরণের পরও তাদের জ্যেষ্ঠতা ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গণনা করা হয়, যা তদন্ত কমিটির মতে অনিয়ম।
তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, তারা প্রশাসনের একটি অংশের ষড়যন্ত্রের শিকার।
এ.বি.এম জসিম উদ্দিন বলেন,
“আমার কাজ আমি করেছিলাম, কিন্তু এখন প্রেষণে (ডেপুটেশনে) আসা কর্মকর্তারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমার পদোন্নতি ১০০% বৈধ।”
রেজাউল ইসলাম বলেন,
“আমাদের হয়রানি করা ছাড়া আর কিছুই না। বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তারা আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছেন।”
মাহমুদা খানম জানান,
“আমি তো নিজের ইচ্ছায় পদোন্নতি নেইনি। যদি প্রক্রিয়া ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেই সময় যারা অনুমোদন দিয়েছে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।”
এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রিয়াদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আরও গভীর তদন্ত করা হবে।
তিনি বলেন,
“বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কিছুটা সময় লেগেছে। যদি তারা আইন বহির্ভূতভাবে পদোন্নতি নিয়ে থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এনসিটিবির উপ-সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন,
“ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনিয়ম না হয়, সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
২০২০ সালে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়:
অভিযুক্তদের আগের পদে ফিরিয়ে আনা
অনৈতিকভাবে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা
পরিবর্তিত পদগুলিকে মূল কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করা
তবে এক বছর পার হলেও এখনও সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হবে।