গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, হামাসের শর্ত ‘সম্পূর্ণ অবাস্তব’
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জিম্মি মুক্তির চুক্তি নিয়ে হামাসের শর্তকে ‘সম্পূর্ণ অবাস্তব’ বলে অভিযোগ তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে এবং পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ জানায়, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে অযথা বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, হামাস মনে করছে যে সময় তাদের পক্ষে রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি ভিন্ন। তারা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেয় না। তবে এবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই আলোচনা পরিচালিত হচ্ছে, যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, “হামাস যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তবে আমরা যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখাব।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে হামাস জানিয়েছে, তারা একজন ইসরায়েলি-আমেরিকান নাগরিকসহ আরও চারজনের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত। তবে এই বিনিময়ের জন্য তাদের প্রধান শর্ত হলো—স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।
এর আগে বুধবার কাতারে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ এক ‘সেতু প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন, যেখানে বলা হয়েছিল, হামাস যদি ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তবে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানো হবে।
তবে হামাসের অনড় অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র কি শুধু মার্কিন নাগরিকদের মুক্তির বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে?
জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সব জিম্মিদের মুক্তির বিষয়েই যত্নশীল। আমরা এমনভাবে কাজ করছি, যাতে স্বাভাবিক বিনিময়ের মাধ্যমে সবাই মুক্তি পায়।”
হামাসের অনড় অবস্থান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া হুঁশিয়ারির কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলে গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা সফল হবে কি না, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা না হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়তে পারে।