দূতাবাসের কর্মকাণ্ড ও স্বাধীন মত প্রকাশ নিয়ে আলোচনার ঝড়
মেক্সিকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও পেশাদারিত্ব বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। তাঁর মতে, সরকারি দীক্ষা ও প্রচারণার ফলে দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম স্বাধীনতা হারিয়েছে।
সাংবাদিক ও কূটনীতিক মুশফিকুল ফজল আনসারী সরাসরি অভিযোগ করেন, “গত ১৫ বছরে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে কোনো স্বকীয়তা নেই। ব্যক্তিত্ব ও পেশাদারিত্ব ধ্বংস হয়ে গেছে। সবাইকে বাধ্য করা হয়েছে নির্দিষ্ট এক রাজনৈতিক দলের প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে।”
তিনি বলেন, “দূতাবাসে যেখানে হাত দিই, কেবল মুজিব, হাসিনা আর নৌকার ছড়াছড়ি। এটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এটি যেন একদলীয় প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।”
রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী জানান, বিদেশি প্রতিনিধিদের উপহার দেওয়ার সামগ্রী যেমন কলম, নোটবুক, মগ, চাবির রিং, ব্যাগসহ অন্যান্য উপহার সামগ্রীর সবকিছুতেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রচারণার উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমার ধারণা, পৃথিবীর এমন কোনো ভাষা নেই, যে ভাষায় বাপ-বেটির বই অনূদিত হয়নি! আমাদের দূতাবাসের এক কক্ষে স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত বইয়ে ঠাসা অসংখ্য বাক্স রয়েছে। এগুলো বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব খাতে অর্থ জমা দেওয়া উচিত ছিল।”
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা সম্প্রতি এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে উল্লেখ করেন যে, মরক্কোয় বাংলাদেশের দূতাবাসের হোমপেজ থেকে কিছু বিতর্কিত ছবি বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, অনেক দূতাবাসেই এখনো একই ধরনের রাজনৈতিক প্রচারণামূলক উপাদান রয়ে গেছে।
গোলাম মোর্তজার এই মন্তব্যের পর মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “শুধু কী মরক্কো? পাবলিক ডমেইনে আর বলতে চাই না। তবে আপাতত মেক্সিকোর সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যানারে দ্রোহের প্রতিচ্ছবি দেখে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।”
মুশফিকুল ফজল আনসারীর এই মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, দূতাবাসের কার্যক্রমে স্বাধীনতার অভাব এবং দলীয় প্রচারণার আধিপত্য একটি গুরুতর ইস্যু।
বিশ্লেষকদের মতে, একটি কূটনৈতিক মিশন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য কাজ করবে, দলীয় প্রচারণার জন্য নয়। রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে এবং বিভিন্ন মহল এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
মেক্সিকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের এই মন্তব্য সরকারি প্রশাসন ও কূটনীতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি যেসব অভিযোগ তুলেছেন, তা যদি সত্য হয়, তবে এটি বাংলাদেশের কূটনীতিক ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মহল কী প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।