ঢাকা, ১২ মার্চ ২০২৫: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যখন লাগামহীনভাবে বাড়ছে, তখন দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের অন্যতম কার্যকর উদ্যোগ হলো ওপেন মার্কেট সেলস (ওএমএস) কর্মসূচি। স্বল্পমূল্যে চাল ও আটা খাদ্যসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে এই কর্মসূচি দেশের অসংখ্য মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে।
ওএমএস: কী ও কেন?
ওএমএস কর্মসূচি মূলত খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হয়, যেখানে নির্দিষ্ট পয়েন্টে কম দামে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই পণ্য নিতে অপেক্ষা করেন নিম্নআয়ের মানুষ। বাজারে যখন চালের দাম কেজিতে ৬০-৭০ টাকা ছাড়িয়ে যায় এবং আটা কেজি ৫০-৬০ তখন মাত্র ৩০ টাকায় ওএমএসের চাল ও ২৪ টাকায় আটা তাদের জন্য অনেকটাই স্বস্তির।
বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক, নিম্নবিত্ত চাকরিজীবী ও বস্তিবাসীদের জন্য ওএমএস যেন এক আশীর্বাদ। অনেকেরই দৈনিক আয় ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে দৈনন্দিন খাবার জোগাড় করাই বড় চ্যালেঞ্জ। বাজারে দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায়, ওএমএস কর্মসূচি থেকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য কিনতে পারা তাদের জন্য বিশাল সহায়তা।
কীভাবে পরিচালিত হয় ওএমএস?
ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় দোকান ও ট্রাকে করে নির্দিষ্ট স্থানে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। সাধারণত ঢাকা মহানগর ,সকল সিটি কর্পোরেশন ও জেলা শহরে এই দোকান ও ট্রাকগুলো পরিচালিত হয়, যেখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে। একেকজন ক্রেতা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য কিনতে পারেন, যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ সুবিধা পায়।
বর্তমানে ওএমএসের আওতায় চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল এবং ৫ কেজি আটা ক্রয় করতে পারেন।
ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়াঃ
ওএমএস কেন্দ্রগুলোর সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও পণ্য সরবরাহ আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। মিরপুরের এক গৃহকর্মী জানান, “আমরা প্রতিদিনই লাইনে দাঁড়াই, কিন্তু অনেক সময় পণ্য ফুরিয়ে গেলে খালি হাতে ফিরতে হয়। সরকারের উচিত সরবরাহ আরও বাড়ানো।”
গাজীপুরে এক পোশাক শ্রমিক মো. রফিক বলেন, “আমাদের আয়ের সঙ্গে বাজারের দামের কোনো মিল নেই। আমরা যদি এই চাল-আটা না পেতাম, তাহলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো।”
সরকারের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ
খাদ্য সচিব বলেন, ওএমএস কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের উপজেলা পর্যায়ে এটি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি গুদামে মজুত থাকা খাদ্যসামগ্রী থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওএমএস সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ফ্লাওয়ার মিলস ওয়ানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মীর শাহে আলম বলেন -আমরা নবগঠিত কমিটি জোড়ালো চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে ওএমএস কার্যক্রম সারা দেশের ৪৯৫ টি উপজেলাতে এবং সকল পৌরসভায় চালু হয়।এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছি ,আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সফলকাম হবো।
সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে। চলতি বছরে এটি আরও বাড়িয়ে ৭০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সমস্যা ও সমাধানের উপায়
ওএমএস কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালিত হলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পণ্য কম পাওয়া যায়, আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী ওএমএসের চাল কালোবাজারে বিক্রি করার চেষ্টা করে।এই সমস্যা সমাধানে সরকারের কড়া নজরদারি করছে,যার ফলে কালোবাজারি একদম কমে গেছে।
ওএমএস কর্মসূচি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এক অবিচ্ছেদ্য সহায়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে এটি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপায় হয়ে উঠেছে। তবে সরকারকে আরও কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে প্রতিটি সুবিধাভোগী ন্যায্যভাবে এই সেবা পায় এবং ওএমএসের পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকে।সংকটময় সময়ে এই কর্মসূচি যত বেশি সম্প্রসারিত হবে, তত বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা পাবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।