শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরে এ বছর পেয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চড়া দামে বীজ কিনে আবাদ করলেও সেই দামে পেয়াজ বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে উৎপাদন খরচের তুলনায় বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন তারা। কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি এবং একাধিকবার বীজ কিনতে হওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে। অথচ বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় অনেকেই জমি থেকে পেয়াজ তুলছেন না। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা মৌসুমে পেয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলে দাম বাড়তে পারে, এতে কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শরীয়তপুরে পেয়াজ চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। জেলার ছয়টি উপজেলায়ই পেয়াজের আবাদ হলেও জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে জেলায় পেয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪,১২০ হেক্টর জমি, তবে চাষ হয়েছে ৪,২৮০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মুড়িকাটা বা কন্দ পেয়াজ আবাদ হয়েছে ৩,৮৬০ হেক্টর এবং হালি পেয়াজ ৪২০ হেক্টর জমিতে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পুরো মাঠজুড়ে চলছে মুড়িকাটা পেয়াজ তোলার কাজ। তবে বাজারে ন্যায্য দাম না থাকায় কৃষকরা হতাশ।
নড়িয়া উপজেলার মীরবহর কান্দি এলাকার কৃষক মজিবর শেখ জানান, এক বিঘা জমিতে পেয়াজ চাষ করতে তার ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারদরে সেই জমির পেয়াজ মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এতে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, “পেয়াজের যে দাম, তাতে আমাদের লস হচ্ছে। তাই পেয়াজ তোলা বন্ধ রেখেছি। বাজার পরিস্থিতি ভালো হলে তুলব, না হলে বড় বিপদে পড়তে হবে।”
জাজিরার টিএন্ডটি এলাকার আরেক চাষি রাজ্জাক পাইক বলেন, “অনেক টাকা খরচ করে বীজ কিনে চাষ করেছি। এখন যে দাম, তাতে খরচই উঠবে না। কৃষকরা যদি লাভবান না হয়, তাহলে সংসার চলবে কীভাবে?”
পেয়াজ চাষে লোকসানের কারণে অনেকে হতাশ হলেও কিছু কৃষক আশার আলো দেখছেন হালি পেয়াজের মাধ্যমে। নড়িয়ার বাচ্চু শিকদার জানান, “মুড়িকাটা পেয়াজে লস হয়েছে। তাই কিছু জমিতে নতুন করে হালি পেয়াজ আবাদ করছি। সামনে ঈদে যদি দাম ভালো হয়, তাহলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। তবে সরকারের কাছে একটাই দাবি, যেন বিদেশ থেকে পেয়াজ আমদানি না করে।”
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, “এ বছর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় মুড়িকাটা পেয়াজ চাষে কৃষকরা লাভবান হতে পারছেন না। তবে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে যদি পেয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা হয়, তাহলে বাজারদর বাড়তে পারে এবং কৃষকরা কিছুটা লাভবান হতে পারেন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, মৌসুমের শুরুতেই পেয়াজ আবাদ করলে তারা বেশি লাভবান হতে পারবেন।”