ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০২৫: ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের ১৪৯৮ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তিটি নিয়ে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি বেশ কয়েকটি স্বার্থবিরোধী শর্ত খুঁজে পেয়েছে, যা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। চুক্তির অসংগতিগুলো উঠে আসায় এটি বাতিলের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
২০১৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রহে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আদানি গ্রুপের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ন্যূনতম বিদ্যুৎ গ্রহণ না করলেও বাংলাদেশকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। তদুপরি, ভারতীয় অংশের সঞ্চালন লাইনের সম্পূর্ণ ব্যয়ও বাংলাদেশকে বহন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত এই চুক্তিতে দেশের স্বার্থের প্রতি অবহেলা করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশকে উচ্চমানের কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি চুক্তির বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেছে। কমিটির অন্যতম সদস্য ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, “এই চুক্তির সম্পূর্ণ সুবিধাভোগী আদানি গ্রুপ। সরকার চাইলে একতরফাভাবে এটি বাতিল করতে পারে, তবে এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
চুক্তিতে থাকা শর্তগুলো ব্যবসায়িকভাবে অসম বলে মনে করছেন অর্থনীতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। ক্যাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “এই চুক্তির ফলে জনগণের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে মামলা করার অধিকার রয়েছে, এবং ক্যাব এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করলে আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, “প্রথম সালিশে হয়তো বাংলাদেশ পরাজিত হতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে অনিয়ম প্রমাণ করা গেলে জয়ের সম্ভাবনা থাকবে।”
এদিকে, চুক্তির আরেকটি বিতর্কিত দিক হলো বিল পরিশোধে বিলম্ব হলে চক্রবৃদ্ধি হারে ১৫% সুদের শর্ত। অন্যান্য বিদ্যুৎ চুক্তিতে এই ধরনের সুদের বিধান না থাকলেও আদানি গ্রুপের ক্ষেত্রে তা যুক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিকর হতে পারে।
জনগণের স্বার্থবিরোধী এই চুক্তি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন মহলে আলোচনা তীব্র হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চুক্তির পেছনে আর্থিক বা রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের গোপন চুক্তি থাকতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যদি চুক্তির দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে, তবে এটি বাতিল করা সহজ হবে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “চুক্তির পেছনে দুর্নীতি থাকলে সেটি আদালতে প্রমাণ করতে হবে, যা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।”