ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০২৫: বাংলাদেশে ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ছয় মাস পার হয়েছে। গণবিক্ষোভ, রক্তপাত ও ক্ষমতা পরিবর্তনের পর দেশ এখন নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক পুনর্গঠনের প্রশ্নে নানা বিশ্লেষণ উঠে আসছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ, রিকশাচালক, দিনমজুর, শ্রমিক, শিক্ষক, আইনজীবী, প্রবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে নেমেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছিল ব্যাপক প্রতিবাদ। সেনাবাহিনীর একাংশ ও সাবেক কর্মকর্তারাও মাঠে নেমে জনতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
তবে আন্দোলনের ভয়াবহ দিক ছিল রক্তপাত। কলেজছাত্র গোলাম নাফিজ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ। ছয় মাস পর সেই রিকশাচালক বলেন,
“এতোদিন মানুষ কোথায় ছিল? এখন সবাই দাবি করছে, কিন্তু পাতিলে তো ভাত নেই!”
দেশে ইন্টারনেট শাটডাউন ও দমন-পীড়নের সময় বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা নেমে আসেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের রাস্তায়। গণহত্যা বন্ধ না হলে রেমিট্যান্স বন্ধের হুমকি দেন অনেকেই। এখন ছয় মাস পর তারা কী ভাবছেন?
জাপান প্রবাসী নেতা কাজী ইনসানুল হক বলেন, “দেশ পরিচালনায় ভালো-মন্দ উভয় ধরনের মানুষ আছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম খুব সফল হয়েছে, এমনটা মনে হচ্ছে না।”
ইউকোহামা ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার আব্দুল মালেক মনে করেন, প্রশাসন ও আইনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
“আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে জনগণ কখনোই স্বস্তি পাবে না,” বলেন তিনি।
আন্দোলনের সময় গুলিবর্ষণের আদেশ না দিয়ে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম আকন্দ বলেন,
“৩ আগস্ট তরুণ অফিসাররা সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কাকে গুলি করবো? কারণ আমাদের ভাইরাও তো ওখানে দাঁড়িয়ে। তখনই সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নেয়, প্রকাশ্যে গুলি করা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনীর কাজ সেনাবাহিনীই করবে, পুলিশের কাজ পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকার পালন করতে পারবে না। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, কারণ ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার ডান, বাম, মধ্যম বা ইসলামপন্থি দলগুলো এখন আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী মনে করেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী কাজগুলো ধীরগতিতে চলছে।
“সাবেক সরকারের দোসররা এখনো প্রশাসনে রয়ে গেছে, যা কার্যকারিতা ব্যাহত করছে।”
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন,
“আমরা এখন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারছি, আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছি।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,
“আগে দরকার জনগণের সরকার গঠন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে জনতা আবার রাস্তায় নামবে।”
ছয় মাস পর দেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও নিত্যপণ্যের দাম কমানো। মানুষ এখন দেখছে, রাজনৈতিক সমীকরণ কেমন বদলাচ্ছে, আর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কোন পথে এগোচ্ছে।
এখন প্রশ্ন একটাই—জনগণের প্রত্যাশা কি আদৌ পূরণ হবে? নাকি আরও দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে?