মাদক পাচারের গোপন রুট ফাঁস: পুলিশি অভিযানে বড় সাফল্য
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে একটি প্রাইভেটকার থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সোনামুখী মসজিদ এলাকা থেকে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা এবং ৩৬৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন রুবেল হোসেন (২৫), নাজমা বেগম (৪০) এবং নাসরিন আক্তার (২৫)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মাদক পরিবহনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
জয়পুরহাট জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, একটি নির্দিষ্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী মসজিদ এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। সেখানে একটি সন্দেহজনক প্রাইভেটকারকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। গাড়ির সামনের আসনে বসা একজন হঠাৎ লাফিয়ে পালিয়ে যায়। তবে পুলিশ বাকি তিনজনকে আটক করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ প্রাইভেটকারটি আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তল্লাশির সময় গাড়ির ভেতর থেকে ১৪টি প্যাকেটে মোড়ানো ৪০ কেজি গাঁজা এবং ৩৬৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা প্রতিবার পাচারের বিনিময়ে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পেতেন। মূলত মাদকগুলো কুমিল্লা থেকে জয়পুরহাটে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছিলেন। পাচারের গোপন রুট এবং চক্রের আরও তথ্য পেতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
“আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা পাচারচক্রের সদস্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হবে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে মাদক পাচার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এ অঞ্চলে মাদক প্রবেশ এবং পরিবহনের ঝুঁকি রয়েছে। পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যৌথভাবে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করলেও পাচারকারীরা কৌশল পরিবর্তন করে নতুন নতুন রুট ব্যবহার করছে।
মাদকদ্রব্য বিশেষত গাঁজা, ইয়াবা এবং ফেনসিডিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৌশলে সরবরাহ করা হয়। কখনও পণ্যবাহী ট্রাক, কখনও প্রাইভেটকার কিংবা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক পাচারকারীরা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে এসব কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
জয়পুরহাট পুলিশ নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। শুধু জানুয়ারিতেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭৫ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। পুলিশের দাবি, এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ও ব্যবহার দেশের যুবসমাজকে বিপথে পরিচালিত করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,
“মাদক কেবল ব্যবহারকারীকেই ধ্বংস করে না, পুরো পরিবার এবং সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।” মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পরিবার এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।
জয়পুরহাটে ৪০ কেজি গাঁজা ও ৩৬৫ পিস ইয়াবাসহ তিনজন গ্রেফতারের ঘটনাটি মাদকবিরোধী অভিযানের একটি বড় সাফল্য। তবে মাদক পাচার বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত অভিযান ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমই পারে এ ভয়াবহ পরিস্থিতি রোধ করতে।