হবিগঞ্জের বাহুবলে সংঘর্ষ, আটক এক নারী
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার বালিচাপাড়া গ্রামে সেচ যন্ত্রের পাইপে ছাগল বাঁধাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আবদুস সাত্তার মিয়া (৫৫) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (তারিখ উল্লেখ করুন) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রোকেয়া বেগম (৪৫) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত আবদুস সাত্তার মিয়া স্থানীয় একজন কৃষক ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে আবদুস সাত্তার তাঁর বাড়ির পাশের জমিতে সেচ দিচ্ছিলেন। ওই সময় তাঁর প্রতিবেশী রোকেয়া বেগম একটি ছাগল এনে সেচ যন্ত্রের পাইপের কাছে বেঁধে রাখেন। এতে সেচকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। আবদুস সাত্তার বিষয়টি নিয়ে রোকেয়া বেগমকে সতর্ক করেন এবং তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
কথা কাটাকাটির সময় পাশের জমিতে কাজ করছিলেন রোকেয়ার স্বামী মোহাম্মদ ইয়াদ উল্লাহ (৬০) এবং তাঁর দেবর মো. নুরু উল্লাহ। তাঁরা বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে আসেন এবং আবদুস সাত্তারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তর্কাতর্কি এক পর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, ইয়াদ উল্লাহ ও নুরু উল্লাহ মিলে আবদুস সাত্তারকে আক্রমণ করেন।
আঘাতে ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে যান আবদুস সাত্তার মিয়া। স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে সেখানে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় এক নারীকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত চলছে এবং বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
আবদুস সাত্তারের মৃত্যুতে পুরো বালিচাপাড়া গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন এবং কৃষিকাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর এই নির্মম মৃত্যু গ্রামবাসীকে স্তম্ভিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র মতে, জমি সংক্রান্ত পুরোনো বিরোধ থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্পষ্ট নয়, তবে সেচ যন্ত্রের পাইপে ছাগল বাঁধাকে কেন্দ্র করে তর্কাতর্কির ঘটনাই মূলত সংঘর্ষে রূপ নেয়।
বাহুবল থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবার মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’
সেচ বা জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় জমি, পানি কিংবা সেচকাজকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। তবে এবারের ঘটনা কৃষকের মৃত্যুর কারণে আরো বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সেচ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং গ্রামবাসীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিরোধ মীমাংসার ব্যবস্থা থাকলেও অনেক সময় তা উপেক্ষিত হয়। ফলে ছোটখাটো বিষয় বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ঘটনার পর স্থানীয়রা পুলিশকে সহায়তা করেছেন এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, গ্রামে শান্তি বজায় রাখতে দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
নিহত আবদুস সাত্তারের পরিবার ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘আমাদের প্রিয় মানুষটি নির্দোষ ছিলেন। একটি তুচ্ছ ঘটনায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন করেছে। আটক রোকেয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং খুব শিগগিরই তদন্তের অগ্রগতি জানানো হবে।
বালিচাপাড়া গ্রামের মানুষ আশা করছেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীরা শাস্তি পাবে। এ ধরনের সংঘর্ষ রোধে স্থানীয় প্রশাসন এবং গ্রামবাসীদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই।