অপরাধ জগতের নির্মম বাস্তবতা: কিশোরীর জীবনাবসান
রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ভয়ঙ্কর এক পরিণতির শিকার হয়েছে। মাত্র দেড় মাসের পরিচয়ে অভিযুক্ত রবিন হোসেনের ডাকে সাড়া দিয়ে দেখা করতে গিয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু সেটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। রাজধানীর মহাখালী থেকে ডেকে নিয়ে হাজারীবাগে এক বন্ধুর বাসায় আটক করে তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করে হাতিরঝিলে ফেলে দেওয়া হয়।
গত ১৬ জানুয়ারি দক্ষিণখান এলাকার ওই কিশোরী বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ফিরে না আসায় তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। প্রথমদিকে কোনো সন্ধান না পেয়ে তিন দিন পর দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরে, ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রবিন হোসেনকে শনাক্ত করে ৩০ জানুয়ারি গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাব্বি নামের আরেক অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের তথ্যমতে, রবিন হোসেন রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা এবং তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। সে ফেসবুকে ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে কিশোরীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর, ১৬ জানুয়ারি দেখা করার কথা বলে তাকে মহাখালীতে ডেকে নেয়। সেখান থেকে কৌশলে হাজারীবাগে নিয়ে যায়, যেখানে তার বন্ধু রাব্বির ভাড়া করা একটি কক্ষ ছিল।
সেখানে রবিন, রাব্বি ও আরও তিনজন মিলে কিশোরীকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে। নির্যাতনের সময় মেয়েটি চিৎকার করলে কাপড় দিয়ে তার মুখ চেপে ধরা হয়, যাতে কেউ শব্দ শুনতে না পারে। একপর্যায়ে শ্বাসরোধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্তরা প্রথমে লাশ গুমের পরিকল্পনা করে। পরে, প্লাস্টিকের বস্তায় কিশোরীর মৃতদেহ ভরে গভীর রাতে রিকশাযোগে গুলশানের পুলিশ প্লাজার পাশে ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়। রাত ৩টার দিকে হাতিরঝিলে বস্তাবন্দি লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
দক্ষিণখান থানার ওসি মোহাম্মদ তাইফুর রহমান মির্জা জানান, পুলিশ রবিন ও রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে এবং ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তারা স্বীকার করে, পাঁচজন মিলে এই নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, হত্যার পর লাশ হাতিরঝিলে ফেলার ফলে সেটি পানির প্রবাহে কিছুটা দূরে গাছগাছালির মধ্যে আটকে যায়। এ কারণেই এতদিন ধরে লাশ একই স্থানে ছিল। অবশেষে, পুলিশের অনুসন্ধানে ১৭ দিন পর লাশের সন্ধান মেলে।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং কিশোর-কিশোরীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এই নৃশংস ঘটনা আমাদের সমাজে অপরাধের ভয়াবহ রূপ তুলে ধরেছে। এরকম অপরাধ বন্ধ করতে হলে প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা, কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া জরুরি।