ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি: ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে আবারও ফিরে এলো গৌরবের ফেব্রুয়ারি। আজ থেকে শুরু হলো ভাষা আন্দোলনের মাস, যা বাঙালির ইতিহাসে শোক ও সংগ্রামের প্রতীক। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ অসংখ্য সাহসী তরুণ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রাজপথে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা পেয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আর বাঙালি পেয়েছিল ভাষার মর্যাদা।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণের ওপর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চাপ সৃষ্টি করা হয়। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঘোষণা করেন, “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু— অন্য কোনো ভাষা নয়।” এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত ছাত্ররা ‘না’, ‘না’ বলে প্রতিবাদ জানান। ওই সময়ই কার্জন হলে একদল ছাত্র বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে স্মারকলিপি প্রদান করে।
এরপরই শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সংগঠিত আন্দোলন। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও ছাত্র মিলে ‘তমদ্দুন মজলিস’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন, যা ভাষা আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ২ মার্চ ফজলুল হক হলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং সেদিনই পূর্ব বাংলায় ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলার মানুষের কণ্ঠরোধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে ভাষার দাবিতে রাজপথে নেমে আসে ছাত্রসমাজ। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিকসহ অনেকে। তাদের আত্মত্যাগেই বাংলা পেয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আসে স্বাধীনতা সংগ্রাম, যা culminates হয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে। একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়, যা জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালে।
ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলাদেশে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন, বইমেলা, সাংস্কৃতিক আয়োজন, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাঙালির ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়।
এই মাস শুধু শোকের নয়, গৌরবেরও। কারণ, এই মাসেই বাঙালি তার ভাষার অধিকার রক্ষায় চূড়ান্ত আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।