পুলিশের অভিযানে ফয়সাল আলী প্রধান আটক, শুক্রবার আদালতে সোপর্দ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আলী প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে উপজেলার ডুগডুগি বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘোড়াঘাট থানার ওসি নাজমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত ফয়সাল আলী প্রধান দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার ২ নম্বর পালশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট পৌরশহরের বাসস্ট্যান্ডে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি হামলা চালিয়েছেন। এই হামলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেয়।
২০২৩ সালের ৪ আগস্ট দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে হঠাৎই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একদল হামলাকারী ওই সমাবেশে হামলা চালায়। এতে ব্যাপক ভাঙচুর ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
- যানবাহন ভাঙচুর করা হয়।
- দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
- কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
- আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য পেট্রলবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এই হামলার ফলে আন্দোলনকারী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনার পর ২৪ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে আসে, ফয়সাল আলী প্রধান এই হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন।
ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় ফয়সাল আলী প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) আদালতে সোপর্দ করা হবে।”
ফয়সাল আলী প্রধানের গ্রেপ্তার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তার দলীয় পরিচয়ের কারণে অনেকেই এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন। তবে সাধারণ জনগণ ও আন্দোলনকারীরা এই গ্রেপ্তারকে ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু আমাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। এর বিচার চাই।” তারা আরও দাবি করেন, হামলায় জড়িত সব ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
ঘোড়াঘাট দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা। এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর শক্ত অবস্থান রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এ অঞ্চলে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ওপর হামলার ঘটনায় আরও অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্তের ভিত্তিতে আরও গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালানো হয়, তবে তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
- গ্রেপ্তারকৃত ফয়সাল আলী প্রধানকে শুক্রবার আদালতে তোলা হবে।
- মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
- আন্দোলনকারীরা তাদের ন্যায়বিচারের দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন।
- প্রশাসন এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর নজরদারি রাখছে।
ঘোড়াঘাটে ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলা এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের চেষ্টা হলে তা আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ফয়সাল আলী প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছে, যা বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া দরকার, কারা প্রকৃতপক্ষে এই হামলার জন্য দায়ী এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।