টঙ্গীর তুরাগ তীরে আব্দুল কুদ্দুস গাজীর শেষ বিদায়
টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুক্রবার সকালে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০) ইজতেমার ময়দানে ইন্তেকাল করেছেন। সকাল ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন শুরা নিজামের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান। এই মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হাজার হাজার মুসল্লির মাঝে।
শুক্রবার সকালে আব্দুল কুদ্দুস গাজী গোসল করতে যান। হঠাৎ তিনি অসুস্থতা অনুভব করলে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই ইজতেমার ময়দানে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর নামাজে জানাজায় বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন
মৃত আব্দুল কুদ্দুস গাজী খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ডুমুরিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর বাবার নাম লোকমান হোসেন গাজী। ধর্মপ্রাণ এই মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন।
বিশ্ব ইজতেমা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী জমায়েত। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মুসল্লি এতে অংশগ্রহণ করেন। এই বৃহৎ সমাবেশে কারও মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আব্দুল কুদ্দুস গাজীর আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর পরিবারসহ উপস্থিত মুসল্লিরা শোকে মুহ্যমান।
ইসলামে মৃত্যুর শিক্ষা
ইসলামে মৃত্যু একটি চিরন্তন সত্য। মুসলমানদের বিশ্বাস, দুনিয়া হলো এক পরীক্ষার স্থান এবং মৃত্যুর পর পরকালীন জীবন শুরু হয়। কুরআনে উল্লেখ আছে, “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১৮৫)। তাই মৃত্যু কখন, কোথায় এবং কিভাবে হবে তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আব্দুল কুদ্দুস গাজীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল নাকি হৃদরোগজনিত কারণে হয়েছে, তা পোস্টমর্টেম রিপোর্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে প্রবীণ বয়সে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
বিশ্ব ইজতেমা শুধু ধর্মীয় সমাবেশ নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক আয়োজন যেখানে ইসলামিক শিক্ষা, দাওয়াত এবং তাবলিগের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা হয়। এখানে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা নিজেদের আত্মশুদ্ধির জন্য আসেন এবং ইসলামের সুমহান বার্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেন।
বিশ্ব ইজতেমার মতো বিশাল আয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইজতেমা ময়দানে প্রতি বছর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অস্থায়ী হাসপাতাল ও মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়। তবে, এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় আরও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই।
বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী সকল মুসল্লির উচিত স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া
- সঠিকভাবে খাবার ও পানি গ্রহণ করা
- উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগজনিত সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আসা
- প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখা
আব্দুল কুদ্দুস গাজীর মৃত্যুতে তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তাঁকে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সবাই মহান আল্লাহর কাছে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
বিশ্ব ইজতেমার মতো পবিত্র সমাবেশে একজন মুসল্লির মৃত্যু অত্যন্ত শোকের বিষয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং আমাদের প্রত্যেককেই একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। তবে, ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু হওয়া একজন মুসলমানের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ তাআলা আব্দুল কুদ্দুস গাজীকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন – এই প্রার্থনাই করি।