ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত সীমান্ত নিয়ে প্রায়ই উত্তেজনা তৈরি হয়। সম্প্রতি সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নির্মাণ ও জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা চলছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রায়ই বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্তে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে গুলিবর্ষণ করে থাকে, যার ফলে কয়েক ডজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার এই ঘটনাগুলো নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হলেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে তেমন কোনো সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি।
সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশ সীমান্তে কাটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা এই সিদ্ধান্ত নেয়। এই বেড়া নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করা। তবে এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) এর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে গাছ কাটার চেষ্টা করে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। যদিও পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এই বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে, কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে উত্তেজনা এখনও রয়ে গেছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারণায় বলেছেন, আগামী বছরের মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তার এই মন্তব্য বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতারা প্রায়ই বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন, যা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ভারতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ঢাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন এবং এটিকে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির কারণ হিসেবে দেখছেন।