বিশ্ব আজ মহাবিপর্যয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে—বিশেষজ্ঞদের নতুন সতর্কবার্তা
(ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫) – তিন বছর স্থবির থাকার পর ২০২৩ সালে ডুমসডে ক্লকের কাঁটা ১০ সেকেন্ড এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালে সেই কাঁটা অপরিবর্তিত থাকলেও এবার ২০২৫ সালে আরও ১ সেকেন্ড এগিয়ে দেওয়া হলো। অর্থাৎ, মানব সভ্যতা এখন ইতিহাসের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে গেছে।
বিশ্বখ্যাত The Bulletin of Atomic Scientists সংগঠনের বিজ্ঞানীরা গতকাল এই ঘোষণা দেন। তারা সতর্ক করেছেন যে বর্তমান বৈশ্বিক উত্তেজনা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার, জলবায়ু সংকট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিশ্বকে মহাবিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আলবার্ট আইনস্টাইনসহ প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা “ডুমসডে ক্লক” তৈরি করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল মানব সভ্যতার ঝুঁকি সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করা। এই প্রতীকী ঘড়িটি “মধ্যরাত” নির্দেশ করে মানব সভ্যতার চূড়ান্ত ধ্বংসকে। যখনই এই ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের দিকে এগোয়, তখন বোঝা যায় যে মানবজাতি ভয়াবহ সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে এই ঘড়ির সময় ছিল ১১:৫৩ মিনিট, অর্থাৎ মধ্যরাত থেকে ৭ মিনিট দূরে। তবে বর্তমানে এটি ১১:৫৯:৩০ মিনিট, অর্থাৎ মাত্র ৩০ সেকেন্ড বাকি!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ডুমসডে ক্লকের কাঁটা এগিয়ে নেওয়ার প্রধান কারণ।
1. যুদ্ধ ও আগ্রাসন: বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং পরমাণু হামলার আশঙ্কা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
2. পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের সামরিক শক্তি বাড়াতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, যা মুহূর্তের মধ্যেই মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
3. জলবায়ু সংকট: ২০২৪ সাল ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। বিশ্বব্যাপী দাবানল, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং খরার প্রকোপ বেড়েছে। তবুও বেশিরভাগ দেশের সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
4. প্রযুক্তির অন্ধকার দিক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং বায়োটেকনোলজির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারও মানবজাতির জন্য নতুন ধরনের হুমকি তৈরি করছে।
5. প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ভবিষ্যৎ: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি আবার ক্ষমতায় এলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেবেন। এটি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাকে বড় ধাক্কা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে মানব সভ্যতা ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপদ ব্যবহার এবং শান্তি স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বিশ্ব এখন মহাবিপর্যয়ের একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে। আরও একটি ভুল সিদ্ধান্ত মানেই চূড়ান্ত ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাওয়া। এখনই সময় বিশ্বনেতাদের জেগে ওঠার!
—