মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে দুঃখজনক হত্যাকাণ্ড
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সীমান্তে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বাংলাদেশি এক যুবককে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (তারিখ উল্লেখ করুন) দুপুরে, কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্তের এওলাছড়া বস্তি এলাকায়। নিহত যুবক হলেন ওই এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলীর ছেলে আহাদ আলী, যার বয়স ছিল ৪৫ বছর। এই মর্মান্তিক ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম আপছার।
সূত্র অনুযায়ী, রোববার দুপুরে জমি নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ভারতীয় নাগরিক হায়দার আলী ও তার সহযোগীদের সঙ্গে নিহত আহাদ আলীর জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে, ভারতীয় নাগরিকরা আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় পাঁচ গজ ভেতরে প্রবেশ করেন এবং সেখানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন আহাদ আলীকে।
রক্তাক্ত অবস্থায় আহাদ আলীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহাদ আলী মারা যান।
সীমান্তবর্তী শিকড়িয়া গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীন আহমদ জানান, নিহত আহাদ আলী এবং অভিযুক্ত ভারতীয় নাগরিক হায়দার আলীর মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তবে জমি নিয়ে বিরোধের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
হত্যাকাণ্ডটি ১০৮৩ নম্বর পিলারের ৩৪ এস সেক্টরের পাঁচ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। সীমান্তে এমন হত্যাকাণ্ড সীমান্তের নিরাপত্তা ও সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
কুলাউড়া থানার ওসি মো. গোলাম আপছার জানান, নিহত আহাদ আলীর মরদেহ বর্তমানে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য দায়ী ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সীমান্তবর্তী এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধ এবং হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা শুধু পারিবারিক দ্বন্দ্ব নয়, বরং এটি সীমান্তের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সীমান্তের উভয় পাশে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে সমাধানের মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।
এই হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়নি, বরং সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপত্তা ও স্বস্তির ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর এই ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।