২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে একটি অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা হয়। দেশটির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এখন এক বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের কেউ কারাগারে, কেউ বিদেশে, আর কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শীর্ষ নেতার বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নেতারা বর্তমানে দেশে কিংবা বিদেশে লুকিয়ে রয়েছেন। আ ক ম মোজাম্মেল হক, নাহিম রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পঙ্কজ দেবনাথ, সাইফুজ্জামান শিখর, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মাহবুবুল আলম হানিফের মত শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “দলটির হাজার হাজার কর্মী উচ্ছেদের শিকার হয়েছে। তারা ঠিকমতো খাদ্য কিনতেও পারছে না। তবে তৃণমূলের কর্মীদের মনোবল এখনও অনেক উঁচুতে। আমরা ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রত্যাশা করছি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দলের নেতারা আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা করছেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে আওয়ামী লীগের এক-তৃতীয়াংশ নেতা কারাগারে, আরেক-তৃতীয়াংশ বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকিরা দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। দলের নেতাদের অভিযোগ, তাদের সম্পত্তি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
এক মন্ত্রী তার বক্তব্যে জানান, তার বিরুদ্ধে ৩৭টি হত্যা মামলা ও প্রায় ১০০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিদিন তার ঠিকানায় আইনি নোটিশ পাঠানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, দলের আরেক নেতা অভিযোগ করেন, “আমার বাড়ি, বাবার বাড়ি এবং ভাইদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ভারতসহ আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন লাভের জন্য কাজ করছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য বৈশ্বিক সহায়তা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং একে “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর” বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, এটি একটি সুপরিকল্পিত প্রচারণার অংশ।
প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আওয়ামী লীগের নেতারা দেশে ফিরে পুনর্গঠনের সংকল্প নিয়েছেন। শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলেন, “আমরা দেশ পুনর্গঠনের সংকল্প নিয়েছি। নেতাকর্মীদের মনোবল এখনও টিকে আছে। জনগণের জন্য কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।”
(সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)