সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দেখানো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভুয়া ছিল। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বিশ্ব এই সময়ে তার দুর্নীতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি।
ড. ইউনূস, যিনি গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, বলেন, শেখ হাসিনা তার শাসনামলে “ভুয়া প্রবৃদ্ধির হার” দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) দাভোসে সবাইকে শিখিয়েছেন কীভাবে একটি দেশ চালাতে হয়। কিন্তু কেউই সেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। এটি মোটেও ভালো বিশ্বব্যবস্থা নয়।”
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন বলে প্রশংসিত হলেও, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বাকস্বাধীনতা দমন এবং ভিন্নমত দমনের অভিযোগে সমালোচিত হন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি ভারত পালিয়ে যান। এরপর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়।
ঢাকা সরকার নয়াদিল্লির কাছে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের আহ্বান জানালেও ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। হাসিনার দল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ড. ইউনূস দাবি করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেখানো অর্থনৈতিক উন্নয়ন “অন্তর্ভুক্তিমূলক” ছিল না। যদিও তিনি প্রবৃদ্ধির হার ভুয়া কেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি, তবে সম্পদের বৈষম্য কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এর জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী। এটি একটি ভালো শিক্ষা হওয়া উচিত। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এটি একেবারেই সত্য নয়।”
ড. ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত। বাংলাদেশের মানচিত্র ছাড়া আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না। বাংলাদেশের স্থলসীমার প্রায় পুরোটাই ভারতের সাথে।”
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং তার ভারত পালানোর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে।
ল
বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধু হিসেবে চীনকে অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেন, “ভারতের সঙ্গে টানাপড়েনের সম্পর্ক আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক কষ্ট দেয়। কিন্তু চীন আমাদের পাশে রয়েছে।”