মাজার-দরবারে অমানবিক হামলা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা দাবি
বিগত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৮০টিরও বেশি মাজার শরীফ ও দরবার শরীফে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এই তথ্য বিশ্ব সূফী সংস্থা নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সংগঠনটি মাজার ও দরবার রক্ষার্থে হামলাকারীদের বিচার এবং সূফী স্থাপনাগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বিশ্ব সূফী সংস্থা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংস্থার কার্যনির্বাহী সদস্য হাসান শাহ সুরেশ্বরী দিপু নূরী। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে সুদূর আরব ও পারস্য থেকে সূফী ও আওলিয়ায়ে কেরাম এসে ইসলাম প্রচার করেছেন। কিন্তু আজ সেই সূফীদের মাজার ও দরবারে ভাঙচুর, লুটপাট এবং তাদের অনুসারীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।”
দিপু নূরী আরও বলেন, “দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পবিত্র মাজার ও দরবারে হামলার মাধ্যমে একটি অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয় বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসেরও চেষ্টা।”
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ছয় মাসে মাজার ও দরবারে হামলার সংখ্যা ৮০টিরও বেশি। এর মধ্যে অনেক মাজারে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে এবং বেশ কয়েকটি দরবারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া মাজার ও দরবারের অনুসারীদের হত্যার অভিযোগও তোলা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- হামলার সংখ্যা: ৮০টিরও বেশি।
- ক্ষতির ধরন: ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ।
- প্রভাব: মাজার অনুসারীদের উপর নির্যাতন এবং হত্যার অভিযোগ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব সূফী সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসানুল হাদী, আফতাব আলম জিলানী, নাছির উদ্দিন চিশতী, মাওলানা তৌহিদুল ইসলাম চিশতি এবং ড. আলাউদ্দিন আলন। তারা সবাই হামলাগুলোর তীব্র নিন্দা জানান এবং দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।
বিশ্ব সূফী সংস্থার নেতারা মনে করেন, এই হামলাগুলো দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারা বলেছেন, “মাজার ও দরবারগুলো শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ ধরনের ঘটনা দেশের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
সংগঠনটি সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি পেশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার: হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা।
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার: মাজার ও দরবারের সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন।
- ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা: দেশের জনগণের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্যোগ।
- ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিগ্রস্ত মাজার ও দরবারগুলোর পুনর্গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান।
বাংলাদেশে মাজার ও দরবারগুলোর দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। এগুলো কেবলমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক। এই স্থানগুলোতে সূফী সাধকরা শুধু ধর্ম প্রচার করেননি, বরং শান্তি, সম্প্রীতি এবং মানবিকতার বার্তা ছড়িয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলাগুলো শুধু ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হতে পারে, যা দেশের সামাজিক ঐক্য এবং স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিশ্ব সূফী সংস্থার আহ্বান এবং দাবিগুলো সরকারের কাছে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। মাজার ও দরবারগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকারের উচিত তৎপর হওয়া। একইসাথে, এই ঘটনার নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।