রাকিব মাহাজনের করুণ পরিণতি: অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য সতর্কবার্তা
লিবিয়ায় দালাল চক্রের নির্যাতনে মাদারীপুরের রাকিব মাহাজন (২৫) নামে এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাতে রাকিবের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার পরিবার। এ ঘটনা মাদারীপুরসহ পুরো এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে।
নিহত রাকিব মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের পখিরা গ্রামের নাজিম উদ্দিন মহাজনের ছেলে। তিন বছর আগে রাকিবকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রলোভনে ফেলে দালাল চক্র। সদর উপজেলার মৃত ফটিক মৃধার ছেলে জাহাঙ্গীর মৃধার মাধ্যমে রাকিবের পরিবার ২৭ লাখ টাকার চুক্তিতে তাকে ইতালিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করার পর রাকিব লিবিয়ায় পৌঁছায়।
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর দালাল চক্রের হাতে বন্দি হয়ে রাকিবকে একটি “গেমঘরে” রাখা হয়। সেখান থেকে মুক্তির জন্য আরও অর্থ দাবি করে দালাল সোহাগ মাতুব্বর। রাকিবের বাবা নাজিম উদ্দিন মহাজন ধারদেনা করে আরও ৫ লাখ টাকা দেন। কিন্তু মুক্তি মেলেনি। দুই বছর চার মাস পর সোহাগের বন্দিদশা থেকে রাকিব মুক্তি পেলেও আবার অন্য দালাল মাজেদ খলিফার হাতে বন্দি হন।
মাজেদ খলিফা নতুন করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। রাকিবের পরিবার এই টাকা জোগাড় করে দিলেও মুক্তি মেলেনি। উপরন্তু, মাজেদের গেমঘরে রাকিবের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। অবশেষে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাকিবের মৃত্যুর খবর তার পরিবারকে নিশ্চিত করেন মাজেদ খলিফা।
রাকিবের বাবা নাজিম উদ্দিন মহাজন বলেন, “সোহাগ আর মাজেদের হাতে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছি। এত টাকা দেওয়ার পরও ছেলের মৃত্যু হলো।” রাকিবের ছোট চাচা শাহজালাল মহাজন বলেন, “আমার ভাতিজাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। আমরা এই হত্যার সঠিক বিচার চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জাহাঙ্গীর মৃধা বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। কেউ বলতে পারবে না যে আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আর ওই ছেলে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে।” তবে মাজেদ খলিফার বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “লিবিয়ায় রাকিব নামে একজন মারা গেছেন বলে মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে দালাল চক্রের বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাকিবের মৃত্যুর ঘটনা লিবিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতি দালাল চক্রের অমানবিক আচরণের আরেকটি উদাহরণ। মানব পাচার প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানব পাচার বন্ধ করতে হলে অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও সুরক্ষিত করতে হবে। দালালদের দমন এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি, পরিবারগুলোকে বিদেশে কাজের নামে দালাল চক্রের ফাঁদে পা দেওয়ার আগে সঠিক যাচাই-বাছাই করতে হবে।