ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে অভিবাসীদের মধ্যে বিপর্যয়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণা কার্যকর হতে পারে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি। এই উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘোষণাটি অবৈধ অভিবাসী এবং সাময়িক ভিসায় বসবাসরত ব্যক্তিদের মধ্যে চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে।
শপথ গ্রহণের দিনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এতে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে অথবা সাময়িক ভিসায় থেকে সন্তান জন্ম দিলে সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। তবে যদি বাবা-মায়ের কেউ মার্কিন নাগরিক হন, তাহলে শিশুটি নাগরিকত্বের অধিকার পাবে। এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো অভিবাসন প্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই ঘোষণা কার্যকর হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনেক ভারতীয় অভিবাসী। বিশেষত, যেসব নারী সন্তানসম্ভবা, তারা প্রিটার্ম সি-সেকশন (আগাম সিজারিয়ান প্রসব) পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন তারা, যাতে শিশু জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকার পায়।
নিউজার্সির একটি ম্যাটারনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. এসডি রামা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আগাম সিজারিয়ান প্রসবের জন্য প্রচুর অনুরোধ পাচ্ছেন। অনেক সাত থেকে আট মাসের গর্ভবতী নারী তাদের স্বামীসহ এই বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত অভিবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
চিকিৎসকরা এই আগাম প্রসব পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। টেক্সাসের চিকিৎসক ডা. এসজি মুক্কালা বলেন, “আগাম প্রসব শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ ধরনের শিশুদের ফুসফুস সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না, তাদের ওজন কম হতে পারে এবং স্নায়বিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।” চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, গর্ভধারণকালীন পূর্ণ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করাই স্বাস্থ্যকর।
এই সিদ্ধান্ত অভিবাসীদের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলবে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার হলো এমন একটি আইন, যা কোনো শিশুর পিতামাতার জাতীয়তা বা অভিবাসন অবস্থার ওপর নির্ভর না করে, জন্মের স্থান অনুযায়ী নাগরিকত্ব প্রদান করে। নতুন নীতিটি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অসংখ্য শিশুর নাগরিকত্ব নিয়ে সংকট তৈরি হবে। বিশেষত, সাময়িক ভিসায় থাকা লাখো ভারতীয়কে এই সিদ্ধান্ত চরম অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে।
ভারতীয় অভিবাসীরা এই সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছেন। প্রিটার্ম সি-সেকশন পদ্ধতি তাদের মধ্যে অন্যতম। হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারির আগে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য অনেক ভারতীয় পরিবার চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। তবে চিকিৎসকরা বারবার সতর্ক করছেন, এই পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে মা ও শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা এই সিদ্ধান্তকে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং মানবিকতার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছে। আইনজীবীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। সংবিধানের এই সংশোধনী জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করে।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত অভিবাসন নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনবে এবং এটি বিশেষ করে ভারতীয় অভিবাসীদের জন্য সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। চিকিৎসকরা আগাম প্রসব পদ্ধতির বিরুদ্ধে সতর্ক করছেন, কারণ এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তবে আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চ্যালেঞ্জের মুখে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। মার্কিন অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তনের এই ধারা দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।