ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি:
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে অধস্তন আদালতের বিচারকরা সরকারের কাছে কার্যত জিম্মিদশায় থাকেন, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের পথে বড় বাধা। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত রিটের শুনানিতে অংশ নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শিশির মনির এ মন্তব্য করেন।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে রিটের শুনানিতে শিশির মনির বলেন, “এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। কার্যত, এটি সরকারের নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা বিচারকদের স্বাধীনতার পরিপন্থী। ফলে বিচারকদের পেশাগত কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয় এবং নিরপেক্ষ বিচারকার্য ব্যাহত হয়।”
শিশির মনির আদালতে আরও উল্লেখ করেন, “রাতে কোর্ট বসিয়ে বিচারকদের সাজা দেওয়ার নজির রয়েছে। এমনকি সরকারের পছন্দমতো আদেশ না দিলে পরদিনই বিচারকদের দুর্গম এলাকায় বদলি করা হয়েছে। অনেক বিচারককে এ কারণে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি। এই অনুচ্ছেদের ফলে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের স্বপ্ন থমকে রয়েছে।”
শিশির মনির সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে বলেন, “এই অনুচ্ছেদের কারণে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে। এটি অবৈধ ঘোষণা না করা হলে বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা সম্ভব হবে না। অবিলম্বে এটি বাতিল করা প্রয়োজন।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট ১০ জন আইনজীবী সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট দায়ের করেন। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধস্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা নির্ধারণ করার বিধান কার্যত নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপকে বৈধতা দেয়। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
পরে ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্ট এই রিটের প্রেক্ষিতে রুল জারি করে। এতে জানতে চাওয়া হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবিতে হাইকোর্টে এই শুনানি চলমান। সংবিধানের এই বিতর্কিত অনুচ্ছেদ বাতিল হলে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠায় একটি বড় পদক্ষেপ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।