ঢাকা: বাংলাদেশের শিল্প খাতে চলমান গ্যাস সংকট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে অনেক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ জেনারেটর চালানোর জন্য যেখানে ১৫ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন, সেখানে মিলছে মাত্র অর্ধেক চাপ।
বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ও এলপিজি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন অনেক শিল্প মালিক। কিন্তু এতে উৎপাদন ব্যয়ের লাগাম আরও ছুটছে। এরই মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবর যেন ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন এক দুঃস্বপ্ন হয়ে এসেছে।
পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করা দরকার। নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের বিল এই নতুন দামে নির্ধারণ করা হবে। তবে পুরোনো গ্রাহকদের জন্য কিছুটা ছাড় রাখা হলেও লোড বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাদেরও নতুন দাম দিতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,
“গ্যাসের দাম এভাবে বাড়ানো হলে শিল্প পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকার যেন এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের জন্য একটি নিরাপদ প্রস্থান পথ তৈরি করে।”
অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ হাশেমের মতে,
“এর আগে গ্যাসের দাম তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। আবার যদি এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি হয়, তাহলে আমাদের শিল্প খাত ধ্বংসের মুখে পড়বে।”
এসএমসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক তসলিম উদ্দিন খান বলেন,
“ডলার, চিনি, সবকিছুর দাম বাড়ছে। এর সঙ্গে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হলে শিল্প খাতকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।”
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্যাপটিভ পাওয়ারে প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা হারে বৃদ্ধি করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালেও গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। সরকারের দাবি, এসব মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যমে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন,
“মূল্য বৃদ্ধি করে ঘাটতি সমন্বয়ের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি জ্বালানি খাতে দুর্নীতির সুরক্ষা দিচ্ছে। এর ফলে শিল্প ও অর্থনীতি চরম সংকটে পড়বে।”