ঢাকা, ২২ জানুয়ারি:
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর একের পর এক বেরিয়ে আসছে তার সরকারের সময়ের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। তার শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে।
শিশুদের বন্দিশালা ও ‘আয়নাঘর’-এর ভয়াবহতা
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার গোপন বন্দিশালা, ‘আয়নাঘর’-এর মর্মান্তিক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। গুম কমিশনের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, অন্তত ছয়জন শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে মাসের পর মাস এই গোপন কারাগারে বন্দি ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মানসিক চাপ সৃষ্টির জন্য শিশুদের দুধ পান করানো থেকেও বিরত রাখা হতো।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এক গর্ভবতী নারী ও তার দুই শিশু সন্তানকে একটি বন্দিশালায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পরিচালিত এসব বন্দিশালায় নারীদের সন্তানসহ আটকে রেখে বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন চালানো হতো।
এক ভুক্তভোগী শিশুকালীন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেছেন, তাকে এবং তার মাকে একসঙ্গে আটক রাখা হয়েছিল। সেই আটককেন্দ্র থেকে তিনি ছাড়া পেলেও তার মা আর ফিরে আসেননি।
কমিশনের রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শিশুদের ব্যবহার করে বাবা-মায়েদের উপর চাপ সৃষ্টি করার ঘটনা ছিল প্রচলিত। এক দম্পতি এবং তাদের শিশুকে আটকে রেখে শিশুটিকে মায়ের দুধ পান করতে না দিয়ে বাবার উপর মানসিক চাপ তৈরি করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার সরকার সবসময় গুমের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছিল, নিখোঁজদের মধ্যে অনেকেই ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেছেন। তবে গুম কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ জন এখনও নিখোঁজ।
গুম কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে জড়িত বাহিনী ও নির্দেশদাতাদের শনাক্ত করে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো গুরুতর মানসিক আঘাত এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিচার না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকা। তার শাসনামলের অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে কমিশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।