বিজিবির বাধায় বন্ধ হলো সীমান্তের বেড়া নির্মাণ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পূর্ব উচনা ঘোনাপাড়া সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা চালায়। মঙ্গলবার ভোর থেকে এই বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু হলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগ বন্ধ করতে বাধ্য হয় বিএসএফ।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের শূন্যরেখার মাত্র ২০ গজ ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ চালাচ্ছিল বিএসএফ। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী, সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে অন্তত ১৫০ গজ দূরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এই আইন অমান্য করে ২৮১ নম্বর মেইন পিলারের ৩৩-৩৪ এবং ৩৫ নম্বর সাব পিলারের মধ্যে বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করে বিএসএফ।
মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে বিজিবির হাটখোলা বিওপি ক্যাম্পকে জানায়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেড়া নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে বলেন। বিএসএফ শেষ পর্যন্ত কাজ স্থগিত করে চলে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, “ঘন কুয়াশার মধ্যেই বিএসএফ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করছিল। আমরা বিষয়টি জানার পর বিজিবি ক্যাম্পকে জানাই। তাদের তৎপরতায় কাজ বন্ধ হয়।”
বিজিবির হাটখোলা বিওপির কোম্পানি কমান্ডার শাহ জাহান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেলে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে ভারতীয় চকগোপাল ক্যাম্পের কমান্ডার দ্বিজেন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএসএফ জানায়, তারা বেড়া নির্মাণের কাজ আর চালাবে না এবং ইতোমধ্যে স্থাপিত অংশটুকু সরিয়ে নেবে।
২০ বিজিবি জয়পুরহাট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, “বিএসএফ কাজ বন্ধ রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বিজিবির কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী, দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেড়া নির্মাণের মতো কাজগুলো শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে করতে হয়, যাতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়। বিএসএফের এই উদ্যোগ স্পষ্টতই আইন লঙ্ঘন করে। তবে বিজিবির সক্রিয়তায় এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা জরুরি। নিয়মিত পতাকা বৈঠক ও সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়ে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।