আদালতে সাবেক মন্ত্রী: টিস্যু পেপারে চিঠি লেখার নেপথ্যের ঘটনা
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় টিস্যু পেপারে চিঠি লেখার ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানির জন্য আদালতে আনা হয়। সেখানে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি টিস্যু পেপারে চিঠি লেখেন, যা আদালত চত্বরে উপস্থিত সবার মধ্যে কৌতূহল তৈরি করে।
সকাল ১০টার দিকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলার রিমান্ড আবেদনের শুনানি চলাকালে, দীপু মনিকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তিনি বাঁ হাতে কয়েকটি টিস্যু পেপার এবং ডান হাতে একটি কলম ধরে ছিলেন। উপস্থিত আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, পাঁচ মিনিট ধরে তিনি টিস্যু পেপারের ওপর কিছু লেখেন।
এরপর চিঠিটি কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির (আইনজীবীর পোশাক পরিহিত) হাতে তুলে দেন। ওই ব্যক্তি চিঠির ছবি তুলে তা নিজের কাছে রেখে দেন। যদিও এ ঘটনা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীর নজরে আসেনি। তিনি জানান, “আদালতের হেফাজতে থাকা একজন আসামি আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো চিঠি লিখতে বা হস্তান্তর করতে পারেন না।” তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আদালতের অনুমতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
দীপু মনির প্রধান আইনজীবী গাজী ফয়সাল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “আমাদের নজরে এ ধরনের কোনো ঘটনা আসেনি। আমরা শুনানিতে ব্যস্ত ছিলাম।” যদিও চিঠির বিষয়বস্তু বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি, তবে এ ঘটনাটি তদন্তের দাবি তুলেছে।
আদালতে চিঠি লেখা বা হস্তান্তরের ঘটনায় প্রোটোকল লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। পিপি ওমর ফারুক বলেন, “কোনো আসামি আদালতের হেফাজতে থাকাকালে আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারেন না।” এটি একটি গুরুতর বিষয়, যা ভবিষ্যতে আদালতের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টিস্যু পেপারে লেখা চিঠি হয়তো কোনো গোপন বার্তা বহন করছে। এটি মামলা সম্পর্কিত তথ্য, ব্যক্তিগত বার্তা বা কোনো কৌশলগত নির্দেশ হতে পারে।
গোপনীয়তার জন্য টিস্যু পেপার ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে, যা সাধারণত নজরে পড়ে না। এছাড়া, এটি সহজে নষ্ট করা যায় বলে এটি বেছে নেওয়া হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি পদক্ষেপ নেবে তা এখন দেখার বিষয়। আদালতের প্রোটোকল রক্ষায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আরও কড়া নিয়ম চালু করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, চিঠির বিষয়বস্তু তদন্ত করে এটি আদালতের প্রোটোকল ভঙ্গ করেছে কিনা তা নির্ধারণ করা জরুরি।
ডা. দীপু মনির আদালতে চিঠি লেখার এই ঘটনা আইনি জগতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি একদিকে যেমন আদালতের কার্যপ্রণালীর ওপর প্রশ্ন তুলেছে, তেমনি অন্যদিকে এর পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাটি ভবিষ্যতে আদালতের নিয়ম-কানুনে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার দিকেও ইঙ্গিত দেয়।