ঢাকা: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ওরফে মাসুদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাত থেকে নামে-বেনামে প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছেন তিনি।
এ পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বার্ষিক বাজেটের চার ভাগের এক ভাগ। অর্থ লুটপাটের এই কেলেঙ্কারিতে তার মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকসহ দেশের ১১টি ব্যাংক এবং একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান জড়িত।
এস আলম গ্রুপের নামে ৯২ হাজার কোটি টাকা, বেনামে ৯৭ হাজার কোটি টাকা এবং ‘ইনডিরেক্ট সুবিধা’র মাধ্যমে আরও ৩৬ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
দেশের বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন এস আলম ২০১৭ সালে। এর পর ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬১ শতাংশ, অর্থাৎ এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, তিনি নিয়ে যান। এর বেশিরভাগই ভুয়া কাগজপত্র ও বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লুটপাট করা হয়।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৪৭ হাজার কোটি টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২৪৭টি বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৩ হাজার কোটি টাকা সরানো হয়েছে। এ ছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এস আলম গ্রুপের অর্থপাচারের বিষয়ে প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। এই ঘটনায় একটি যৌথ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছে দুদক।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলোকে মুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে।
এস আলম গ্রুপের ২৪টি কোম্পানির মালিকানাধীন ৩২ কোটি ১০ লাখ শেয়ার অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এসব শেয়ারের বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
এস আলম সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে ছয় মাসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নিতে বলেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থপাচারের বিপুল অঙ্কের অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।