বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেও সম্প্রতি সরকারের পতনের পর বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে গেছেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কার্যত জনপ্রতিনিধি শূন্য হয়ে পড়েছে এবং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারের বাস্তব চিত্র
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৪টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদের ৩১৯টি উপজেলার চেয়ারম্যান, এবং ৩৩০টি পৌরসভার মধ্যে ২০৫টি পৌরসভার মেয়র আত্মগোপনে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে।
প্রায় একই চিত্র দেখা যাচ্ছে সিটি করপোরেশনগুলোতে। ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ৯টির মেয়র আত্মগোপনে রয়েছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১২৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১৮ জনই আত্মগোপনে আছেন। এর ফলে নিয়মিত প্রশাসনিক কাজগুলোতে ব্যাঘাত ঘটছে এবং সাধারণ জনগণের সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তি বেড়েছে।
কিছু অঞ্চলের বিশেষ পরিস্থিতি
বাগেরহাট জেলায় পুরো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। জেলার সব উপজেলা চেয়ারম্যান এবং মেয়রগণ আত্মগোপনে রয়েছেন। শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য জেলাগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম। রাজশাহী বিভাগের ৬৭টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ৫৫টির চেয়ারম্যান আত্মগোপনে আছেন। আর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়রও আত্মগোপনে রয়েছেন।
ব্যতিক্রমী গোপালগঞ্জ
অন্যদিকে, গোপালগঞ্জে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। এখানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পাঁচ উপজেলা চেয়ারম্যান এবং চার পৌর মেয়র সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তি
আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের কারণে সাধারণ জনগণকে নানারকম সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ ইত্যাদি সেবা পেতে মানুষকে প্রতিদিনই ফিরে যেতে হচ্ছে। অনেক পৌরসভায় গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
সুশাসনের অভাব
এই পরিস্থিতিকে সুশাসনের অভাব হিসেবে উল্লেখ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক। তিনি মন্তব্য করেন যে, যারা দলের মনোনয়নে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই দুর্বৃত্ত এবং জনরোষের ভয়ে এখন আত্মগোপনে চলে গেছেন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সাময়িক কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
উপসংহার
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদী আধিপত্য থাকলেও সরকারের পতনের পর বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে দেশের জনগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।