গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং সদ্য পদত্যাগ করা ব্রিটিশ অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়েছে। দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট না দিয়ে টিউলিপ লেবার পার্টির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন।
গত বছর স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) গাজায় চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত হয়ে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। এতে উল্লেখ করা হয়, সকল যুদ্ধরত পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে চাপ দিতে ব্রিটিশ সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। লেবার পার্টির অন্তর্ভুক্ত ৫৬ জন এমপি পার্টির নির্দেশনা অমান্য করে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেন। কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিক এবং আরেক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি রুশনারা আলী ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
টিউলিপ সিদ্দিকের এই সিদ্ধান্ত লেবার পার্টির প্রতি তার আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হলেও, অনেকেই এটিকে গাজায় যুদ্ধরত জনগণের পাশে না দাঁড়ানোর প্রতীক হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে টিউলিপ সিদ্দিক একজন মন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের সময় ব্রিটিশ আর্থিক খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন।
রুশনারা আলী এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে তার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমি এসএনপির প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলাম। তবে যারা লেবার এমপি হিসেবে ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং পার্টির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, পার্টির অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি আপসানা বেগম লেবার পার্টির নির্দেশনা উপেক্ষা করে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেন। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে জানান, “আমি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছি। এটি আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ এবং মানবতার পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।” আপসানা বেগম আরও উল্লেখ করেন, “আমরা প্রমাণ করেছি যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে পারি।”
টিউলিপ সিদ্দিকের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তার বিরোধীরা মনে করেন, টিউলিপ মানবাধিকার এবং গাজার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হারিয়েছেন। তবে তার সমর্থকরা বলেন, লেবার পার্টির নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, টিউলিপের পদত্যাগের পর গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ইলন মাস্কের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বও টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ এবং তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন।
ইলন মাস্ক এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন, “যিনি ব্রিটিশ শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তিনি নির্যাতনকারীদের সুরক্ষা দিয়েছেন। আর যিনি দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী, তিনিই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।” তার এই মন্তব্য টিউলিপের কর্মকাণ্ড এবং তার নেতৃত্ব নিয়ে আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
গাজায় চলমান সংঘাতের কারণে লাখ লাখ মানুষ মানবিক সংকটে ভুগছে। শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যদের যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিউলিপ সিদ্দিক এবং রুশনারা আলী তাদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই আহ্বান উপেক্ষা করেছেন বলে অনেকে মনে করেন।
টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ এবং তার সিদ্ধান্তের প্রভাব ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুমাত্রিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। লেবার পার্টির অভ্যন্তরীণ নীতি ও রাজনীতি এই ঘটনার মাধ্যমে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত, গাজায় সংঘাত অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ এবং ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে টিউলিপ সিদ্দিকের সিদ্ধান্ত ও পদত্যাগ দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।