দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। মন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তবে দুর্নীতির অভিযোগের জেরে তার পদত্যাগের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় আনেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের (পূর্বে টুইটার) মালিক ইলন মাস্ক। টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তার পদত্যাগ প্রসঙ্গে এক্সে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ইলন মাস্ক।
পোস্টে মাস্ক লেখেন, “যুক্তরাজ্যের শিশুকল্যাণের দায়িত্বে থাকা লেবার পার্টির মন্ত্রী নির্যাতনকারীদের সুরক্ষা দেন। আর তাদের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই একজন দুর্নীতিবাজ।” মাস্কের এই বক্তব্য টিউলিপের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক সিটি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধেই গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হলো, বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা এবং লন্ডনে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট উপহার গ্রহণ করা। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অর্থনীতিবিষয়ক সিটি মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
টিউলিপের পদত্যাগের পরপরই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও পদত্যাগ নিয়ে যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই তার পদত্যাগকে ন্যায়সঙ্গত বলে মন্তব্য করেছেন, আবার কেউ কেউ এটি তার দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।
বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করা হোক। অন্যদিকে, টিউলিপ এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন এবং তার পদত্যাগকে নিজের সম্মানের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। আমি সবসময় আমার দায়িত্ব পালনে সতর্ক থেকেছি এবং জনগণের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। কিন্তু এই মিথ্যা অভিযোগের কারণে আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।”
ইলন মাস্কের মন্তব্য এই বিষয়টিকে আরও বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মন্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেকেই মাস্কের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের ঘটনা যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের প্রয়োজনীয়তার ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনা দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রশ্ন তুলেছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি থাকবে।