আদালতের নির্দেশে এস আলম পরিবারের শেয়ার জব্দ
ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।
দুদকের আইনজীবী মীর মোহাম্মদ আলী সালাম জানান, এস আলম ও তার পরিবারের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানকালে এসব শেয়ারের সন্ধান পাওয়া যায়।”
দুদকের উপপরিচালক (টিম লিডার) মো. আবু সাঈদ আদালতে এই আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধান চলাকালে তার ও তার পরিবারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট শেয়ারের তথ্য পাওয়া যায়।
দুদকের মতে, এসব শেয়ার অবরুদ্ধ না করলে অভিযোগ নিষ্পত্তির আগেই তা বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আদালত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ১৪ ধারার আওতায় শেয়ার অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন।
গত মঙ্গলবার আদালত এস আলম ও তার পরিবারের ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ১৬টি স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দেন। এছাড়া ৮৭টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে মোট ২২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
এর আগে, গত ১৯ ডিসেম্বর আদালত সাইফুল আলমের ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেন। এই পদক্ষেপগুলো আদালতের দায়িত্বশীল তৎপরতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর, আদালত সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এই তালিকায় তার দুই পুত্র আশরাফুল আলম ও আহসানুল আলম ছাড়াও রয়েছেন তার ভাই মোরশেদুল আলম, সহিদুল আলম, রাশেদুল আলম, আবদুস সামাদ, ওসমান গণি এবং অন্যান্যরা।
দুদকের আইনজীবী মীর মোহাম্মদ আলী সালাম জানান, এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক খাতকে সুশৃঙ্খল রাখতে সহায়ক হবে। অনুসন্ধানের মাধ্যমে আরও তথ্য সংগ্রহ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ চলবে।
এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ইস্পাত, বিদ্যুৎ, খাদ্যপণ্য, ব্যাংকিং এবং জাহাজ নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে তাদের বিশাল কার্যক্রম রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তাদের সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আদালতের এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের কঠোর অবস্থানকে তুলে ধরে। এস আলম পরিবারের শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতার দৃষ্টান্ত। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে অর্থ পাচার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।