জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ: নতুন নামের প্রস্তাব
বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশন দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। বিদ্যমান “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামটি পরিবর্তন করে “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ” রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে “প্রজাতন্ত্র” শব্দের পরিবর্তে “নাগরিকতন্ত্র” শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ (বুধবার) সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়। কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বর্তমান সংবিধানে উল্লেখিত নাম “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান” পরিবর্তন করে “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান” রাখা উচিত। এতে প্রস্তাব করা হয়েছে, সংবিধানের সমস্ত প্রযোজ্য ক্ষেত্রে “প্রজাতন্ত্র” শব্দের পরিবর্তে “নাগরিকতন্ত্র” শব্দ ব্যবহৃত হবে। তবে ইংরেজি সংস্করণে “রিপাবলিক” এবং “পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ” শব্দগুলো অপরিবর্তিত থাকবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতে, এই পরিবর্তন দেশের জনগণের অধিকার এবং ক্ষমতার প্রতিফলনকে আরও সঠিকভাবে উপস্থাপন করবে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্র” শব্দটি ঐতিহাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে রাষ্ট্র পরিচালনার ধারণাকে বোঝায়, যেখানে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ ও নাগরিক অধিকারকে পুরোপুরি তুলে ধরা হয় না। অন্যদিকে, “নাগরিকতন্ত্র” শব্দটি সরাসরি জনগণের ক্ষমতা ও স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জনগণের সম্মতি এই পরিবর্তনের মূল ভিত্তি। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, “জনগণের সম্মতি নিয়ে আমরা এই সংবিধান জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করছি।”
এই সুপারিশের পর বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। একদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই পরিবর্তন দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকে আরও জনমুখী করবে। অন্যদিকে, কিছু মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে, এই পরিবর্তন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
যদিও বাংলায় নাম ও শব্দ পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে, ইংরেজি সংস্করণে কোনো পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়নি। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে “The Constitution of the People’s Republic of Bangladesh” নামটিই বহাল থাকবে। এটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও চিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
সংবিধানের নাম পরিবর্তনের জন্য একটি সংবিধান সংশোধনী প্রয়োজন হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। এছাড়া, সংশোধনীটি অনুমোদনের আগে জনগণের মতামত গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি হবে বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই পরিবর্তন দেশের আইনি কাঠামো এবং জাতীয় পরিচয়কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ এই পরিবর্তনের সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আশাবাদী। তাঁদের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের রাজনীতি ও সমাজের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। তবে, তারা এটাও মনে করেন যে, এই পরিবর্তন কার্যকর করার আগে জনগণের অংশগ্রহণ এবং সম্মতি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” থেকে “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ” নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসতে পারে। তবে, এই পরিবর্তন কার্যকর করার জন্য জনমত গ্রহণ, আইনগত প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব বিবেচনা করতে হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হতে পারে।