চাঁদপুরসহ আশপাশের অঞ্চলে রোটা ভাইরাসের তাণ্ডব
শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে চাঁদপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর মতো অঞ্চলে এই সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। শিশুদের মধ্যে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চাঁদপুরের মতলব আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ দিনে এখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৫৫০ জন রোগী। প্রতিদিন গড়ে ৩০৩ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৭৭ জন, যা মোট রোগীর ৮৫.২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে এবং দূষিত পানির ব্যবহার এই রোগ ছড়ানোর মূল কারণ। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও ডায়রিয়ার প্রকোপ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৭০ হলেও, একসঙ্গে ৪০০ রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ডা. এম ডি আল ফজল খান জানান, হাসপাতালের পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, ওষুধ এবং চিকিৎসা-সরঞ্জাম রয়েছে। এছাড়া কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সেবা প্রদান করছেন।
চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য:
- চাঁদপুর সদর: ৩৮৫ জন
- ফরিদগঞ্জ: ২১১ জন
- হাজীগঞ্জ: ১৯০ জন
- কচুয়া: ২৯১ জন
- মতলব উত্তর: ১৫৮ জন
- মতলব দক্ষিণ: ১৪৩ জন
- শাহারাস্তি: ১১৫ জন
কুমিল্লা এবং আশপাশের জেলা থেকেও রোগী আসছেন। কুমিল্লার বরুড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, চান্দিনা, তিতাস, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার এবং নাঙ্গলকোট অঞ্চলের রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকে আসা রোগীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অপরিহার্য। শিশুদের বিশুদ্ধ পানি পান করানো, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে সরকারের তরফ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ বাড়ানোর প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। একইসঙ্গে, স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে প্রচার কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
শীতজনিত রোগের প্রকোপ কমাতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শিশুদের সুস্থতা এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।