জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের দেয়ালে ফুটে উঠেছে শহীদ মো. ইকরামুল হক সাজিদের প্রাণবন্ত মুখ। তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে তার সাহসী প্রতিবাদ। তবে এই দৃশ্য আরও গভীর করে তুলেছে এক মায়ের বেদনাকে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে জবি শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের সামনে হাজির হন সাজিদের মা-বাবা। দেয়ালে আঁকা ছেলের ছবির দিকে এক মুহূর্ত চুপচাপ তাকিয়ে ছিলেন তারা। হঠাৎই সাজিদের মা বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার কষ্টমাখা চিৎকার আর চোখের অঝোর জল আশপাশের পরিবেশ ভারী করে তোলে।
সাজিদের মা বারবার বলছিলেন, “আমার ছেলে! আমার সাজিদ!”
সাজিদের বাবা পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও তার চোখের জল যেন মনের বেদনার গল্প বলে দিচ্ছিল। গ্রাফিটির দিকে অপলক তাকিয়ে তিনি যেন তার ছেলেকে খুঁজে ফিরছিলেন।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা চলাকালে মিরপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবন্ত শিক্ষার্থী মো. ইকরামুল হক সাজিদ। মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দীর্ঘ আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১৪ আগস্ট চিরবিদায় নেন তিনি।
সাজিদের নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনে তৈরি করা হয়েছে একটি গ্রাফিটি। এটি আঁকেন কয়েকজন তরুণ শিল্পী, যারা মনে করেন সাজিদ ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। তাদের ভাষায়, “আমরা চেয়েছি সাজিদের স্মৃতি অমলিন রাখতে। তিনি শুধু একজন শিক্ষার্থী ছিলেন না, ছিলেন সাহসের প্রতীক।”
এক সহপাঠী বলেন, “সাজিদ ছিল আমাদের প্রেরণা। তার মতো সাহসী একজন মানুষকে আমরা ভুলতে পারি না। এই গ্রাফিটি আমাদের প্রতিদিন তার ত্যাগের কথা মনে করিয়ে দেবে।”
গ্রাফিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক পথচারী আবেগময় কণ্ঠে বলেন, “এই ছবি শুধু সাজিদের নয়, এটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিটি সংগ্রামী কণ্ঠস্বরের প্রতীক।”
২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবন”।
সাজিদ আজও তার সহপাঠী, বন্ধু এবং প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে আছেন। তার স্মৃতি শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামী সকল কণ্ঠের প্রেরণা হয়ে থাকবে।