সুবর্ণার মৃত্যুর আগে চিরকুটে অভিযোগ এবং এর পেছনের গল্প
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন সুবর্ণা আক্তার সুমনা নামে ১৭ বছরের এক কিশোরী। মৃত্যুর আগে তিনি একটি চিরকুটে তার জীবন নষ্ট করার জন্য দুই ব্যক্তিকে দায়ী করেছেন। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কেদার গ্রামে বিষপান করেন সুমনা। প্রেমিক কাওছার আলীর প্রতারণা এবং শারীরিক সম্পর্কের পরিণতিতে গর্ভধারণ করলেও সন্তানের স্বীকৃতি পাননি। দীর্ঘ দিন ধরে চলা চাপা ক্ষোভ এবং সামাজিক লজ্জার কারণে তিনি বিষপানের পথ বেছে নেন।
মৃত্যুর আগে সুমনা একটি চিরকুটে লিখেছেন:
“আমার মৃত্যুর জন্য জাহেদা দায়ী। আমার জীবনটা নষ্ট করেছে কাওছার। আমি এই দুনিয়া থেকে চলে যাচ্ছি। আমি তখনই শান্তি পাব, যখন জাহেদা আর কাওছার সারা জীবন জেলে ধুঁকে ধুঁকে মরবে।”
এই চিরকুট সুমনার মৃত্যুর পেছনের কারণগুলোর একটি কষ্টকর ছবি তুলে ধরে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাদুমোড় এলাকার শহিদুল ইসলামের মেয়ে সুমনার সঙ্গে তার প্রতিবেশী কাওছার আলীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন তারা, যার ফলে সুমনা গর্ভবতী হন। ঘটনাটি জানাজানি হলে সুমনার পরিবার কাওছারের পরিবারকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে কয়েক দফা গ্রাম্য সালিশ বসলেও কোনো সমাধান হয়নি।
এর মধ্যেই কাওছার গোপনে অন্যত্র বিয়ে করে, যা সুমনার জন্য চরম মানসিক আঘাতের কারণ হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে, আদালত মামলাটি রেকর্ড করার নির্দেশ দেয়।
বিষপানের পর সুমনাকে প্রথমে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ জানুয়ারি সকালে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশে মামলাটি ৭ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছে। কাওছারসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করা হলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ করছে।
সুমনার মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনাটি সমাজে নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং বিচারহীনতার একটি করুণ উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী এবং মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা সমাজের প্রতি এক অশনি সংকেত। প্রেম এবং প্রতারণার পরিণতিতে নারীদের এই করুণ পরিণতি এড়াতে পরিবার, সমাজ এবং প্রশাসনকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে।
সুবর্ণা আক্তারের করুণ মৃত্যু শুধুমাত্র একটি পরিবারকে নয়, সমগ্র সমাজকে নাড়া দিয়েছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নারীদের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।