ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও বাজার বিশৃঙ্খলার শঙ্কা
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি এবং ভ্যাট ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রোববার (১২ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সংস্থার একাধিক নেতা বর্তমান ভ্যাট নীতির বিরুদ্ধে তাদের মতামত তুলে ধরেন। তারা মনে করেন, নতুন করে ভ্যাট আরোপিত হলে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও সীমিত হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশে বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, সবজি, এবং অন্যান্য মৌলিক পণ্য সাধারণ মানুষের জন্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ভ্যাট ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে, যা সরাসরি ভোক্তাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, “বর্তমান সরকার রেভিনিউ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ভ্যাট বাড়ানোর কথা ভাবছে, কিন্তু এই নীতির ফলে বিপরীত প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষ যখন বেশি দাম পরিশোধ করতে অপারগ হবে, তখন বাজারে ক্রয়-বিক্রয় হ্রাস পাবে। ফলে, সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
নেতারা আরও বলেন, বর্তমান নীতি ব্যবসাবান্ধব নয়। তারা জোর দিয়ে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই ব্যবসায়ীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ব্যবসা পরিচালনা সহজতর না হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতে গিয়ে তারা উল্লেখ করেন:
- পণ্যের চাহিদায় হ্রাস: উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা কমিয়ে দেবে।
- মধ্যম ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি: এই শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ তাদের আয় সীমিত।
- ব্যবসা পরিচালনায় বাধা: উচ্চ ট্যাক্স বোঝা ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্যাক্স বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। কারণ, যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, তখন বাজারে পণ্য বিক্রয় কমে যায়। এটি সরবরাহ চেইনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভ্যাট বাড়ানোর পরিবর্তে সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে পারে:
- কর ফাঁকি রোধ: সঠিক মনিটরিং সিস্টেম তৈরি করে কর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব।
- নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ: বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদী রাজস্ব বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
- ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা: ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে নীতি প্রণয়ন করলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
সাধারণ মানুষ মনে করে, বাজারে পণ্যের দাম এমনিতেই চড়া। এর সাথে নতুন ভ্যাট ট্যাক্স যোগ হলে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। একজন ভোক্তা বলেন, “আমরা যে আয় করি, তা নিত্যপণ্য কেনার জন্যই শেষ হয়ে যায়। যদি ভ্যাট বাড়ানো হয়, তাহলে পরিবারের খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে।”
এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ করেছেন:
- ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা।
- বাজারের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে নীতিমালা প্রণয়ন।
- ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে যৌক্তিক সমাধান বের করা।
নিত্যপণ্যের বাজারে চলমান অস্থিরতা এবং ভ্যাট ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের উচিত ব্যবসায়ীবান্ধব এবং জনগণের স্বার্থে টেকসই নীতি গ্রহণ করা। রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।