অনলাইনে প্রতারণার শিকার: ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ
জিনের মাধ্যমে গর্ভধারণের প্রলোভন দেখিয়ে এক অসহায় নারীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি প্রতারক চক্র। সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) তৎপরতায় এই চক্রের এক সদস্যকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি আলামিন মিয়া (৩৬), যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের মো. আরজু মিয়ার ছেলে।
সিআইডি জানিয়েছে, ভুক্তভোগী নারী শান্তা (ছদ্মনাম) সন্তান না হওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। একদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমুতে ‘জিনের মাধ্যমে কবিরাজি চিকিৎসার দ্বারা সন্তান ধারণ সম্ভব’ শীর্ষক একটি পোস্ট দেখতে পান। পোস্টে থাকা তথ্য অনুযায়ী তিনি চক্রটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে চক্রটি তাকে বিভিন্ন ধাপের ভুয়া চিকিৎসার জন্য টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়।
চক্রটি শান্তার কাছ থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে মোট ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রথমে তারা তাকে “জিন ভোগ দেওয়া” এবং “আসর বসানোর” নামে টাকা দেয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। পরে তারা দাবি করে, জিনের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন না হলে শান্তার জীবনে ভয়ংকর বিপদ ঘটবে, এমনকি জিন তার স্বামীসহ তাকে হত্যা করতে পারে।
এই ভীতি প্রদর্শন করেও তারা আরও টাকা আদায়ের চেষ্টা চালায়। দীর্ঘদিন এভাবে প্রতারিত হওয়ার পর শান্তা বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং গত ১৮ ডিসেম্বর লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রটির এক সদস্য আলামিন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলামিন মিয়া তার প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। চক্রটির অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
এ ধরনের প্রতারণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের অসহায়ত্ব ও বিশ্বাসকে পুঁজি করে করা হচ্ছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষগুলো চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে অনলাইনে তথ্য যাচাই করার পরামর্শ দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণকে যে কোনো ধরনের সন্দেহজনক কার্যক্রম সম্পর্কে দ্রুত তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জিনের মাধ্যমে গর্ভধারণের নামে প্রতারণার ঘটনাটি সমাজে অনলাইন প্রতারণার আরেকটি দৃষ্টান্ত। এই ধরনের প্রতারণা বন্ধে সাইবার সিকিউরিটি জোরদার এবং জনগণকে সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়ানো জরুরি।