নওগাঁর কৃষকদের বিপাকে ফুলকপির দরপতন
নওগাঁর কৃষকরা ফুলকপি চাষে ভালো লাভের আশা করলেও এবার বাজারে ব্যাপক দরপতনের কারণে তাদের চরম হতাশার মুখে পড়তে হয়েছে। নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা ফুলকপি বিক্রির জন্য সকাল থেকে ভিড় জমাচ্ছেন, কিন্তু পাইকারি দামে মাত্র ৫০ পয়সা থেকে ২ টাকায় ফুলকপি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেলার কৃষকরা জানিয়েছেন, গত বছর ফুলকপির ভালো দাম পেয়ে এ বছর চাষ বাড়িয়েছিলেন। তবে মৌসুমের মাঝামাঝি এসে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না তারা।
ডাক্তারের মোড়ে পাইকারি বাজারে কৃষক আকবর হোসেন বলেন, “এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন ফুলকপি প্রতি পিস ১ থেকে ২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও ক্রেতা পাচ্ছি না। ধার-দেনা করে চাষ করেছি, এখন সেই টাকাও পরিশোধ করতে পারছি না।”
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় ৬ হাজার ২০০ টন ফুলকপি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
নওগাঁ কৃষিবিপণন কর্মকর্তা সোহাগ সরকার বলেন, “চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক বেশি। বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় কৃষকরা সঠিক দাম পাচ্ছেন না।”
একই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ফুলকপির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দেখা গেছে। আজিমপুর কাঁচাবাজারে ক্রেতা উজ্জ্বল হোসেন বলেন, “আমি ৩০ টাকায় একটি ফুলকপি কিনেছি। শুনেছি গ্রামে দাম অনেক কম।”
কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী শিপন জানান, “গ্রামের বাজারে কৃষকরা সরাসরি পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পণ্য ঢাকায় আনতে অনেক হাত বদল হয়, ফলে দাম বাড়ে।”
কৃষকদের মতে, উৎপাদন খরচ ও বাজারমূল্যের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্যের কারণে তারা চরম বিপদে পড়েছেন। একদিকে ধার-দেনা, অন্যদিকে ফসলের সঠিক দাম না পাওয়ায় পরিবার চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরাসরি কৃষক থেকে ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছানোর একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে কৃষি বিপণন কেন্দ্র স্থাপন এবং পরিবহন খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
নওগাঁর কৃষকদের এই সমস্যাটি দেশের কৃষি খাতের একটি বড় চ্যালেঞ্জকে সামনে নিয়ে এসেছে। উৎপাদিত ফসলের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে কৃষকদের আর্থিক সঙ্কট আরও গভীর হতে পারে।