ভূমিকম্পের প্রতিক্রিয়ার ভিন্নতা: বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। উৎপত্তিস্থল ছিল তিব্বত, এবং রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭.১। তবে বাংলাদেশে এর তীব্রতা তুলনামূলক কম ছিল। এই ভূমিকম্পের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ বলেছেন, তারা কিছুই টের পাননি। আবার কেউ জানিয়েছেন, এটি বেশ ভালোভাবে অনুভূত হয়েছে।
কেন একই স্থানে অবস্থান করেও সবাই ভূমিকম্প অনুভব করেন না? এই প্রশ্ন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, এটি ব্যক্তিগত সংবেদনশীলতা, অবস্থান এবং আচরণের ওপর নির্ভর করে।
ভূমিকম্প অনুভূতির তারতম্যের কারণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, ভূমিকম্প টের পাওয়া বা না পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে ব্যক্তি কোথায় এবং কী অবস্থায় ছিলেন।
তিনি বলেন, “আপনি কত তলায় অবস্থান করছেন, সেটি ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করে। আপনি যত উপরের দিকে থাকবেন, ভূমিকম্পের কম্পন বা ঝাঁকুনি টের পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।”
ড. শাখাওয়াত আরও জানান, “কিছু মানুষ গতি বা মোশন ভালোভাবে অনুভব করতে পারেন। তাদের সংবেদনশীলতা বেশি। কিন্তু যারা সংবেদনশীলতা কম রাখেন, তারা ভূমিকম্পের মৃদু কম্পন বুঝতে পারেন না।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় ব্যক্তি কী করছিলেন, তার ওপরও এটি নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি স্থিরভাবে টেবিলে বসে থাকেন, তার টের পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে, যিনি রান্না করছেন বা দৌড়াদৌড়ি করছেন, তিনি হয়তো এটি টের পাবেন না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, “আমি সাধারণত খুব কম মাত্রার ভূমিকম্পও অনুভব করি। তবে আজকের ভূমিকম্প টের পাইনি। কারণ তখন আমি বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর জন্য ব্যস্ত ছিলাম।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, একই ভবনের ৮-৯ তলার বাসিন্দারা শক্তিশালী ঝাঁকুনি টের পেয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের দূরত্বের ওপর এর অনুভূতিশক্তি নির্ভর করে। নিকটস্থ এলাকায় মানুষ এটি তীব্রভাবে টের পায়। কিন্তু দূরবর্তী এলাকায় অনেকে এটি অনুভব করেন না।
১. স্থির থাকুন: ভূমিকম্প শুরু হলে কোনো টেবিল বা শক্ত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন। ২. উঁচু তলা এড়িয়ে চলুন: বহুতল ভবনে থাকলে দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ৩. আতঙ্কিত হবেন না: ভূমিকম্প চলাকালীন ধৈর্য ধরুন এবং নিরাপদ আশ্রয় নিন। ৪. ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে সতর্ক থাকুন: ভবন বা স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করুন।
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিন্ন হতে পারে। সংবেদনশীলতা, অবস্থান এবং কার্যকলাপ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের দুর্যোগে সচেতনতা ও প্রস্তুতিই হতে পারে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর মূল চাবিকাঠি।