দেশের বেকারত্ব বৃদ্ধি: শ্রমশক্তি হ্রাসে সংকট তীব্রতর
বাংলাদেশে কর্মসংস্থান খাতের বর্তমান অবস্থা ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যার ফলে বেকারত্বের হার ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬০ হাজার, যেখানে ২০২৩ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) নির্ধারিত মান অনুযায়ী, যারা গত সাত দিনের মধ্যে এক ঘণ্টারও কম কাজ করেছেন এবং কাজের সন্ধানে ছিলেন, তারা বেকার হিসেবে বিবেচিত হন।
তবে এবার বিবিএস দুটি গাইডলাইন অনুসরণ করে আলাদা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আইএলওর ১৩তম গাইডলাইনে যারা নিজের ভোগের জন্য কাজ করেন তাদের কর্মে নিয়োজিত ধরা হয়, আর ১৯তম গাইডলাইনে কেবল মজুরি বা মুনাফার জন্য কর্মরতদের কর্মে নিয়োজিত ধরা হয়। ১৯তম গাইডলাইনের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬০ হাজার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পুরুষ বেকারের সংখ্যা নারীর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে পুরুষ বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৯০ হাজার, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার। অন্যদিকে, নারীদের বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৭০ হাজার, যা আগের বছরে ছিল ৮ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে পুরুষ বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার এবং নারী বেকার বেড়েছে ২০ হাজার।
বিবিএসের হিসাব অনুসারে, বর্তমানে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার, যা ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ছিল ৬ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে শ্রমশক্তিতে থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে ১৯ লাখ ৫০ হাজার।
শ্রমশক্তির বাইরে থাকা বিশাল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এখন ৬ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার। তারা সাধারণত ছাত্র, গৃহিণী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, কিংবা কাজ করতে অনিচ্ছুক মানুষ। এদের কর্মে পুনঃসংযোজন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুব শ্রমশক্তির সংখ্যাও কমছে। ২০২৪ সালে যুব শ্রমশক্তি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার, যা ২০২৩ সালে ছিল ২ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ যুব শ্রমশক্তি ১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার এবং নারী ১ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার। এক বছরে যুব শ্রমশক্তির সংখ্যা কমেছে ২১ লাখ ১৭ হাজার।
শিল্প, কৃষি এবং সেবা খাতে কর্মে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা সব ক্ষেত্রেই কমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগের অভাবই এই হ্রাসের প্রধান কারণ।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব মোকাবিলায় দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
- টেকসই শিল্পায়ন: নতুন শিল্পখাত তৈরি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের প্রসার ঘটানো।
- প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ: যুবসমাজকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দেওয়া।
- নারী কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: নারীদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
- কৃষি খাতের আধুনিকায়ন: কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ এবং কৃষকদের সহায়তা প্রদান।
বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি বজায় রাখতে হলে শ্রমশক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং বেকারত্ব দূর করতে এই খাতগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজন।