বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ইরফান খানের স্মৃতি আজও জীবন্ত
২০২০ সাল। পৃথিবী তখন এক মহামারির গ্রাসে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে সবাই গৃহবন্দি। আর সেই সময়ে বলিউড হারায় এক দুর্দান্ত প্রতিভা—ইরফান খান। স্ত্রী এবং দুই পুত্রকে রেখে অগণিত ভক্তের হৃদয় ভেঙে তিনি পাড়ি জমান চিরতরে। তার মৃত্যুর প্রায় সাড়ে চার বছর পরও ইরফান খানের শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি তার স্ত্রী, লেখক ও প্রযোজক সুতপা সিকদার। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক হৃদয়গ্রাহী সাক্ষাৎকারে তিনি তার অভিজ্ঞতা এবং মানসিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।
ইরফানের মৃত্যুর পর প্রতিদিনের জীবন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সুতপার জন্য। তিনি বলেন, “ইরফানকে নিয়ে কথা বলা এখনও আমার জন্য অত্যন্ত কঠিন। আমি একটি বই লেখার চেষ্টা করছি যা ইরফানকে নিয়ে। তবে এটি কোনো সাধারণ স্মৃতিচারণ নয়। বরং এটি আমাদের জীবনের কিছু মজার ঘটনা নিয়ে। একইসঙ্গে আমি একটি ছবির স্ক্রিপ্ট লেখার কাজেও মন দিয়েছি। তবে এই ছবি ইরফানকে নিয়ে নয়। এই দুই প্রজেক্ট আমার জন্য একেবারে ভিন্ন জগৎ তৈরি করেছে। কিন্তু এগুলো করতে গিয়েও আমার মনে হয়েছে, ইরফানের চলে যাওয়ার ধাক্কা থেকে আমি এখনও পুরোপুরি বের হতে পারিনি।”
সুতপা জানিয়েছেন যে ইরফানের মৃত্যুর পরে তার লেখালিখি শুরু করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিন বছর ধরে তিনি কিছুই লিখতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমার মানসিক অবস্থা তখন এমন ছিল যে আমি কিছুই করতে পারছিলাম না। ইরফানের মৃত্যু আমাকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আমার জীবন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল। তার শূন্যতা শুধু একজন স্বামীর না থাকার বেদনা নয়, বরং ৩৪ বছরের এক সঙ্গীর হারানোর যন্ত্রণা।”
সুতপা আরও উল্লেখ করেন যে ইরফান তার শুধু স্বামী ছিলেন না, তিনি ছিলেন তার বন্ধু, তার সঙ্গী। “আমরা একে অন্যের সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টা কাটিয়েছি। তার হঠাৎ চলে যাওয়াটা আমাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে,” বলেন সুতপা।
ইরফান খানের স্মৃতি এখন সুতপার সৃষ্টিশীলতার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। তিনি জানিয়েছেন, ইরফানের জীবনের কিছু মজার দিক তুলে ধরতে একটি বই লেখার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার কাজও করছেন। এই দুটি কাজ তার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তিনি বলেন, “আমার কাছে লেখালিখি একটি প্যাশন। তবে এই প্যাশনকে কাজে লাগাতে গিয়ে আমি অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি। এখন ধীরে ধীরে আমি সেই পথে ফিরতে চেষ্টা করছি।”
ইরফান খানের চলে যাওয়া বলিউডের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। কিন্তু তার স্ত্রী সুতপার সংগ্রামী মনোভাব তার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়, প্রতিটি কাজ ইরফানের প্রতি তার ভালোবাসারই প্রতিফলন।
ইরফানের মৃত্যু কেবল তার ব্যক্তিগত জীবনের শূন্যতা নয়, এটি বলিউডের জন্যও এক বিশাল ক্ষতি। সুতপা সিকদার সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। তার সংগ্রাম, সৃষ্টিশীলতা এবং ইরফানের প্রতি তার ভালোবাসা প্রতিটি পাঠকের জন্য এক অনুপ্রেরণার গল্প।
ইরফান খান এবং তার পরিবার আজও ভক্তদের মনে জীবন্ত। তার জীবন ও কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুতপা তার স্মৃতিকে জীবন্ত রাখার যে প্রচেষ্টা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের এই যাত্রা আমাদের শেখায় ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, এবং সৃষ্টিশীলতার শক্তির কথা।