টয়োসু ফিশ মার্কেট: বিশ্ববিখ্যাত মাছের বাজারে নববর্ষের ঐতিহ্য
জাপানের রাজধানী টোকিওর টয়োসু ফিশ মার্কেটে অনুষ্ঠিত বার্ষিক টুনার নিলামে ব্লুফিন প্রজাতির একটি টুনা মাছ বিক্রি হয়েছে ২০ কোটি ৭০ লাখ ইয়েনে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এই বিশাল আকৃতির মাছটি আকার ও ওজনে প্রায় একটি মোটরসাইকেলের সমান এবং ওজন ছিল ২৭৬ কেজি। এটি এ বছর’র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া টুনা।
টয়োসু ফিশ মার্কেট নববর্ষ উপলক্ষে প্রতিবছর এই বিশেষ নিলামের আয়োজন করে। এই নিলামে জাপানের বড় বড় সুশি রেস্তোরাঁর মালিক এবং খাদ্য ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। এই বছরের নিলামে ব্লুফিন টুনাটি ওনোডেরা গ্রুপ কিনেছে। তারা জানিয়েছে, মাছটি তাদের মিশেলিন-তারকাপ্রাপ্ত গিনজা ওনোডেরা রেস্তোরাঁ এবং দেশের অন্যান্য নাদামান রেস্তোরাঁয় পরিবেশন করা হবে। এই ঐতিহ্যবাহী নিলাম শুধুমাত্র ব্যবসায়িক নয়, বরং এটি সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত।
ওনোডেরা গ্রুপের কর্মকর্তা শিনজি নাগাও এএফপিকে জানান, “বছরের প্রথম টুনা সৌভাগ্য বয়ে আনার প্রতীক। আমরা আশা করি, আমাদের ক্রেতারা এই টুনা খেয়ে একটি দারুণ বছর শুরু করবেন।” উল্লেখ্য, ওনোডেরা গ্রুপ টানা পাঁচ বছর ধরে ইচিবান টুনা নিলামে শীর্ষ দর প্রদান করছে। গত বছর তারা শীর্ষ টুনার জন্য ১১ কোটি ৪০ লাখ ইয়েন ব্যয় করেছিল।
এই বিশাল আকারের ব্লুফিন টুনাটি ধরা হয়েছিল উত্তর জাপানের আওমোরি অঞ্চলে। এই অঞ্চলটি তার উন্নত মানের সামুদ্রিক খাদ্যের জন্য বিখ্যাত। ব্লুফিন টুনা অত্যন্ত মূল্যবান এবং সুস্বাদু একটি মাছ, যা সুশি এবং সাশিমির জন্য খুবই জনপ্রিয়।
১৯৯৯ সালে টুনার নিলামের তুলনাযোগ্য রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে, সর্বোচ্চ মূল্য উঠেছিল ২০১৯ সালে। সেবার ২৭৮ কেজি ওজনের একটি ব্লুফিন টুনা ৩৩ কোটি ৩৬ লাখ ইয়েনে বিক্রি হয়েছিল। এই রেকর্ড গড়েছিলেন জাপানের ‘টুনা কিং’ খ্যাত সুশি রেস্তোরাঁর মালিক কিয়োশি কিমুরা। টয়োসু ফিশ মার্কেটের এমন রেকর্ড ভাঙা নিলামগুলো জাপানের খাদ্য সংস্কৃতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
টয়োসু ফিশ মার্কেট ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম মাছের বাজার হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিদিন ভোরে এখানে টুনাসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই বাজারের বিশেষত্ব শুধু টুনার নিলামেই সীমাবদ্ধ নয়; এখানে সামুদ্রিক খাবারের অন্যান্য আইটেমও পাওয়া যায়। এবারের নিলামে হোক্কাইডোর সামুদ্রিক আরচিন রেকর্ড ৭০ লাখ ইয়েনে বিক্রি হয়েছে, যা এই বিশেষ সামুদ্রিক খাবারের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
ব্লুফিন টুনার উচ্চ মূল্য সাধারণত এর বিরলতা, গুণগত মান এবং স্বাদের কারণে। এ ধরনের নিলাম শুধুমাত্র বাজার চাহিদা নয়, বরং এটি জাপানের ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং এর প্রসারের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। মিশেলিন-তারকাপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁগুলো এই বিশেষ টুনা পরিবেশনের মাধ্যমে তাদের অতিথিদের একটি অনন্য অভিজ্ঞতা দেওয়ার চেষ্টা করে।
বিশেষজ্ঞরা ব্লুফিন টুনার উচ্চমূল্য এবং অতিরিক্ত আহরণের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বজুড়ে ব্লুফিন টুনার চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। টেকসই মৎস্য চাষ এবং মাছের প্রজনন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এই মূল্যবান প্রজাতির মাছ ভবিষ্যতেও সংরক্ষিত থাকে।
টয়োসু ফিশ মার্কেটের বার্ষিক নিলাম শুধু একটি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান নয়, এটি জাপানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং খাদ্যের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার প্রকাশ। ব্লুফিন টুনার নিলাম এ বছর আবারো প্রমাণ করলো, জাপানের খাবারের প্রতি তাদের মনোযোগ এবং উত্সাহ কতটা গভীর। তবে, এই উচ্চমূল্যের নিলামগুলো টেকসই মৎস্য চাষের গুরুত্বও স্মরণ করিয়ে দেয়।