শফিকুল আলম বলেন, “আমরা দেশের অশান্ত সময়টা পার করেছি। এখন দেশ অনেকটাই স্থিতিশীল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অনেক উন্নতি ঘটেছে। অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। আমলাতন্ত্রেও আমরা স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে এনেছি, যদিও কিছু কিছু জায়গায় এখনও উত্তেজনা চলছে। সব মিলিয়ে দেশ পরিচালনায় গত পাঁচ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি একশোর মধ্যে ৯০ ভাগ সফল বলে মনে করি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত বাড়ছে এবং অর্থনীতির উন্নতি ঘটছে। রপ্তানি খাতেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে; সেপ্টেম্বরে ৭ শতাংশ, অক্টোবরে ২১ শতাংশ, নভেম্বরে ১৬ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ডিসেম্বরের শেষে একটি ভালো প্রবৃদ্ধি হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। কারণ, আমরা তো চাই অপরাধ আরও কম হোক।”
নির্বাচন ইস্যুতে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দুটি সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন দিলে সেটা আগামী ডিসেম্বরে এবং আরও বেশি সংস্কার চাইলে সময়টা আরো ছয় মাস এগোতে পারে। তিনি বলেন, “গোটা বিষয়টা নির্ভর করছে সংস্কার নিয়ে সংলাপটা কেমন হবে, আমরা কতটা সংস্কার করতে চাচ্ছি তার ওপর।” তিনি আরও বলেন, “সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। বিষয়টা এমন না যে, এক-দেড় বছরের মধ্যে আমাদের প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচিত সরকার এলে তারা এই সংস্কার আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনটা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান কাজ। এই সংস্কারটা আগে করতে হবে।”
তিনি জানান, সংবিধান সংশোধনের জন্য কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। এ কাজ এগিয়ে নিতে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। ওই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ গঠিত হয়েছে, যেখানে অধ্যাপক ইউনূস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রক্লেমেশন বা জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশ না হওয়া প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “এ বিষয়ে বিস্তারিততে যেতে চাই না। তবে একটি ঘোষণাপত্রে দেশের সব রাজনৈতিক দলের মতামতের অংশগ্রহণ থাকুক তা চায় অন্তর্বর্তী সরকার। সবাই একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে একটা ঘোষণাপত্র তৈরি হোক, আর সেখানে ড. ইউনূস অবশ্যই থাকবেন।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন ধরনের বক্তব্য থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। সবার মতামত এক হবে – এটাও ঠিক না। সবাই সবার মত, চিন্তা-ভাবনাগুলো জানাবেন। জনগণ সেখান থেকে বেছে নেবে কোনটা তাদের জন্য ভালো। এই মতামত আদান-প্রদানের সময় যে কোনো সংঘাত ঘটবে তা আমি মনে করি না।”
সর্বশেষ, তিনি উল্লেখ করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ, বক্তৃতার মাধ্যমে একে অপরকে আক্রমণ সব গণতান্ত্রিক দেশেই হয়। এটা শুধু আমাদের দেশেই হয় না। পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনীতিতে এই সংস্কৃতি আরও ভয়াবহ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্যাম্পেইনের সময় দেখবেন তাদের মধ্যে কী ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য চলে। আসলে রাজনীতিতে এটা সাধারণ ব্যাপার, বিতর্ক থাকবেই। সবচেয়ে বড় কথা, এই তর্ক-বির্তকে যদি সবাই মিলে অংশ নেয় তবে একটা সুষ্ঠু সমাধানে আসা যায়।