অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইসলামাবাদ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা স্পষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে ইসলামাবাদ সফরের সম্মতি জানিয়েছেন। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এটি দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ইসহাক দার আরও জানান, সফরের সময় পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে। এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান কূটনৈতিক অচলাবস্থার সমাধানের ইঙ্গিত মিলেছে।
আগামী মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি হবে ২০১২ সালের পর কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।
পূর্ববর্তী সফরে হিনা রব্বানি খার ২০১২ সালে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ঢাকা সফর করেছিলেন। তার সেই সফরের তুলনায় বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে আঞ্চলিক সহযোগিতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক ক্রমাগত শীতল ছিল। পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাগুলোতে সাড়া না দেওয়ার কারণে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারত গমন ও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন শুধু কূটনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয়েই উন্নয়নশীল আট মুসলিম দেশের জোট ডি-৮ এর সদস্য। নতুন সম্পর্কের এই উষ্ণতা ডি-৮ এর লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সহযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রগুলোতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নের এই নতুন অধ্যায় কেবল দুই দেশের জন্যই নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এটি ইতিবাচক দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য পারস্পরিক আস্থা ও কূটনৈতিক সংলাপ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।