নাটোর প্রতিনিধি:
উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম শস্যভাণ্ডারখ্যাত নাটোরের সিংড়ার চলনবিল অঞ্চল, যা কৃষির জন্য বিখ্যাত, সেখানে দিন দিন কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষের সেই চিরচেনা দৃশ্য। একসময় কাকডাকা ভোরে কৃষকরা গরু, লাঙল এবং জোয়াল নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়তেন জমি চাষের জন্য। কিন্তু বর্তমানে এটি শুধুই স্মৃতি।
বিগত কয়েক দশকে বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার ও আধুনিক প্রযুক্তি কৃষিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। লাঙল-জোয়াল দিয়ে জমি চাষের পরিবর্তে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে পাওয়ার টিলার এবং ট্রাক্টর। আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে কৃষকরা অল্প সময়েই জমি চাষ করতে পারছেন। ফলে কৃষিকাজে সময় ও শ্রম কম লাগছে।
নাটোরের সিংড়ার শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দী এলাকায় এখনো গরু দিয়ে হালচাষের বিরল দৃশ্য দেখা যায়। কৃষক জান মোহাম্মদ বলেন, “আগে আমার ৫ বিঘা জমিতে গরু দিয়ে হালচাষ করতাম। এটি জমির উর্বরতা শক্তি বাড়াতো এবং ফসল ফলানোর জন্য কম সার ও কীটনাশক লাগতো। এখন এসব আর তেমন দেখা যায় না।”
নাগরকান্দী গ্রামের প্রবীণ কৃষক কালু প্রামাণিক জানান, একসময় হাল চাষের জন্য তার বাড়িতে ৪-৫ জোড়া বলদ গরু ছিল। তিনি বলেন, “গরুর লাঙল দিয়ে চাষের ফলে জমিতে ঘাস কম হতো এবং গরুর গোবর থেকে জৈব সার তৈরি হতো। এতে ফলনও ভালো হতো। কিন্তু এখন আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে এই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।”
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ বলেন, “গরু, লাঙল এবং জোয়াল দিয়ে হালচাষ ছিল পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি। এটি গ্রামীণ ঐতিহ্য এবং কৃষকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। কিন্তু আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিকে প্রায় বিলুপ্ত করে দিয়েছে।”
স্থানীয় যুবক সামাউন আলী জানান, “গরু দিয়ে হালচাষ করলে জমিতে জৈব সার তৈরি হতো এবং ঘাস কম থাকতো। কিন্তু এখন পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টরের কারণে গরু দিয়ে চাষাবাদ প্রায় নেই বললেই চলে। এটি আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ ছিল, যা হারিয়ে যাচ্ছে।”